বাংলাবাজার পত্রিকা
ঢাকা: মিলারদের কারসাজিতে সারাদেশের পাইকারী ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। দু’মাস আগেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সরকার ও মিলারদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকের পর দাম কমে আসে।
কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর চালের দাম বাড়াতে মিলাররা আবারও তৎপর হয়ে ওঠেছে।
সম্প্রতি ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বাড়ানো হয়েছে ১০০-২০০ টাকা।
ফলে খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। বর্তমানে মিলপর্যায়েই মিনিকেট চাল ৪৬ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। ওই চাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। আর খুচরায় ৫০ টাকা।
অথচ ৫ দিন আগে মিনিকেট চাল মিলপর্যায়ে ছিল ৪২ টাকা। ৫ দিন আগে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৪৫-৪৬ টাকা।
চাল বাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী গত ১৬ জানুয়ারি সরকারি গুদামে মজুত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন।
তার মধ্যে চাল ১১ লাখ ৮৩ হাজার মে. টন এবং গম ৩ লাখ ২৩ হাজার মে. টন।
মন্ত্রণালয়ের মতে খাদ্যশস্যের এ মজুত সন্তোষজনক। তাছাড়া এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির শঙ্কাও নেই।
কিন্তু গত সোমবার মিলাররা প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল ৩৩-৩৪ টাকা বিক্রি করে।
৫ দিন আগে যা ছিল ২৯-৩০ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিআর-২৮ বিক্রি হয় ৩৪-৩৫ টাকায়। পাঁচ দিন আগে ছিল ৩১-৩২ টাকা।
সেদিন খুচরা পর্যায়ে একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। ৫ দিন আগে ছিল ৩৪-৩৫ টাকা। তাছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা মিলপর্যায়ে সোমবার বিক্রি হয় ২৭ টাকা কেজি।
৫ দিন আগে ছিল ২৪ টাকা। পাইকারি বাজারে একই চাল সোমবার বিক্রি হয় ২৯ টাকা। পাঁচ দিন আগে ছিল ২৪ টাকা।
তাছাড়া সোমবার খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৩৫ টাকা, যা পাঁচ দিন ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে এই চালের দাম খুচরাপর্যায়ে বাড়ে কেজিতে ৩-৫ টাকা।
সূত্র জানায়, মিল মালিকরা বলছে তাদের কাছে চাল নেই।ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো অর্ডার করলেও চাল দেয়া যাবে না।
তবে তারা একটি দাম জানিয়ে বলে ওই দামেই চাল নিতে হবে। কারণ, ধানের দাম বেশি। অথচ দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই। এবার চালের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বরং মিলাররাই বাড়তি মুনাফার আশায় পাইকারি থেকে খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তাকে জিম্মি করে বেশি টাকা আদায় করছে।
দেশে যে পরিমাণ চাল আছে তাতে চালের দাম বাড়ার কথা নয়। অথচ ৫ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যে মিনিকেট চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে ৫ দিন আগে প্রতি বস্তা ২১০০ টাকা করে আনা যেত। তা এখন ২৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ফলে ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, ভরা আমন মৌসুমে কৃষকরা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পানির দামে ধান বিক্রি করেছে। এখন কৃষকের ঘরে তেমন আর ধান নেই।
বরং কৃষকের ঘরের ধান এখন মিল মালিকদের কাছে মজুত রয়েছে। আর কৃষকের ঘরে ধান ফুরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে ধানের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ফলে কৃষকের লাভ এখন ভোগ করবে মিল মালিকরা। পাশাপাশি কৃষকদের ঘরে আমন ধান প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুরোদমে আমন সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ।
এদিকে চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে মিলাররা বলছে, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকারি আমণ সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ায় বেড়েছে চালের দাম।
মূলত চুক্তি অনুযায়ী খাদ্য বিভাগে চাল সরবরাহ করতে মিল মালিকরাও বাজারে ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
ওই কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। তারপর ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
আর বেশি দামে ধান কেনায় চালের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে। তাছাড়া বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে বিআর-২৮ ও মিনিকেট জাতের চালে।
আর ওই জাতের ধানের উৎপাদন হয় এপ্রিলের দিকে। তখন ওই জাতের ধান না পাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান জানান, হঠাৎ করে চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। কারণ, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ধানেরও বাম্পার ফলন হয়েছে।
তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। দাম যেন আর না বাড়ে সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সে জন্য বিশেষভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে।