স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে। এটি জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে স্ট্রোককে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে।
শীতকালে স্ট্রোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। আসুন জেনে নেই স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ, এর কারণ এবং শীতকালে এর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ।
* স্ট্রোকের লক্ষণ
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বা হঠাৎ প্রকাশ পায় এবং এ উপসর্গ দ্রুত শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো হলো-
▶ মুখমণ্ডলের অবশভাব : মুখের একপাশ ঝুলে পড়া বা হাসি দেওয়ার সময় একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া।
▶ হাত ও পায়ের দুর্বলতা : এক বা দুই পাশের হাত বা পা আচমকা দুর্বল বা অবশ হয়ে যেতে পারে।
▶ বাকশক্তি হারান : কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, জড়ান কথা, বা কথা বোঝার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
▶ দৃষ্টি সমস্যা : এক বা দুই চোখে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা ঝাপসা দেখা।
▶ হঠাৎ ভারসাম্য হারান : হঠাৎ মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারান বা হাঁটতে সমস্যা হওয়া।
▶ মাথাব্যথা : অকস্মাৎ তীব্র মাথাব্যথা, যা অন্য কোনো কারণে ব্যাখ্যা করা যায় না।
* টিপস
FAST পদ্ধতিতে স্ট্রোক শনাক্ত করুন।
▶ F (Face) : মুখের একপাশ কি ঝুলে গেছে?
▶ A (Arms) : দুই হাত তুলতে বলুন, খেয়াল করুন এক হাত নিচে পড়ে যাচ্ছে কিনা।
▶ S (Speech) : কথা কি স্পষ্ট না?
▶ T (Time) : ওপরের লক্ষণগুলো দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
* শীতকালে স্ট্রোক কেন বেশি হয়
▶ রক্তনালির সংকোচন : শীতের ঠান্ডা তাপমাত্রায় রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়। এটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি করে।
▶ উচ্চরক্তচাপ : শীতে শরীর তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
▶ রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি : ঠান্ডা তাপমাত্রায় রক্ত ঘন হয়ে যায় এবং জমাটবাঁধার প্রবণতা বাড়ে। এটি মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে স্ট্রোক ঘটাতে পারে।
▶ শরীরচর্চার অভাব : শীতকালে অনেকেই বাড়ির ভেতরে থাকতে পছন্দ করেন এবং শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেন। এটি রক্ত চলাচলকে ধীর করে দেয় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
▶ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ : ঠান্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসযন্ত্রের অসুখ, যেমন ফ্লু বা ঠান্ডা লেগে রক্তে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এ কারণে রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
* প্রতিরোধে করণীয়
▶ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন : নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসারে চলুন।
▶ গরম পরিবেশে থাকুন : শীতকালে উষ্ণ পোশাক পরুন এবং ঘর উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন।
▶ সুষম খাবার খান : ফল, শাকসবজি এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান।
▶ শরীরচর্চা করুন : শীতেও প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
▶ ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন : এগুলো রক্তনালির ক্ষতি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
▶ পানি পান করুন : শীতে কম পানি পান করলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
স্ট্রোক একটি প্রাণঘাতী সমস্যা, তবে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। শীতকালে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি হলেও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ ঝুঁকি কমিয়ে সুস্থ থাকা যায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ব্যায়াম, এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।