সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত, তবে বাড়ছে রাজধানীর তাপমাত্রা। প্রকৃতির এই ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতির মাঠেও বাড়ছে উত্তেজনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে, যার মূল কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকা। বুধবার সারা দেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ কর্মসূচি সফল করতে দলের শীর্ষ ১২ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল করেছিল দলটি। তার আগে ২৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে তারা।
এদিকে গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে বিএনপি ও তার সহযোগীরা যেন কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে না পারে তাই বুধবার রাজনীতির মাঠে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে থাকবে তাদের সতর্কাবস্থান। বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির পাল্টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
দেশের বৃহৎ এই দল দুটির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ফলে সাধারণর নগরবাসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে দেশের ১০টি শহরে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকাসহ আট বিভাগীয় শহর আছে। এছাড়া কুমিল্লা ও ফরিদপুরেও এ গণঅবস্থান কর্মসূচি হবে। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে কর্মসূচি চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ গণঅবস্থান অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকার কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন জ্যেষ্ঠ নেতা। বাকি দুজন হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস।
এছাড়া সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ময়মনসিংহে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, রংপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, খুলনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান এবং ফরিদপুরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন।
এই কর্মসূচি থেকে রাজধানীতে বিএনপি যেন কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে না পারে সেই লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করবে। আর বিকেল ৩টায় মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দুটি সমাবেশেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, ১১ জানুয়ারি আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। আমরা সমাবেশের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছি। ১১ জানুয়ারি ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ বলেন, ১১ তারিখ আমাদের শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া কেউ যেন কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ওইদিন প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ বেলা ১১টায় ফার্মগেটে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে। এসব সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
একইসঙ্গে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এছাড়া দেশের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্কাবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।