বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

উপনির্বাচনে ভোটের খরা!

উপনির্বাচনে ভোটের খরা!

বিএনপির ছেড়ে দেয়া ৬ আসনে বুধবারের উপনির্বাচনে ভোটের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কম ছিল। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোটগ্রহণ শেষে বলেছেন, নির্বাচনে আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। ভোটে কোনো অনিয়মের উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিইসি। যদিও বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোটকেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ, কেন্দ্রের ভেতর থেকে ককটেল উদ্ধার ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘কমিশন সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিয়েছে। টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে নজর রেখেছে। অনিয়মের উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েকটি জায়গায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। দুয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে বহিরাগত লোক দেখা গেছে, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, গণমাধ্যমের খবর দেখে তারা ওই এলাকা থেকে তথ্য নিয়েছেন। একটি কেন্দ্রে একজন নারী ভোটার তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে বুথে ঢুকেছেন। আরেকটি কেন্দ্রে এক ভদ্র মহিলা একজন অসুস্থ লোককে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন।

সিইসি বলেন, ‘এগুলো হতে পারে। এগুলোকে আমরা খুব গুরুতর বা ব্যাপক ব্যতয় মনে করছি না। ভোটের ফলাফল পালটে যেতে পারে, এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে মনে হয়নি।’

অভিযোগ উঠেছে, ভোটের মাঠে ইসির নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন প্রার্থী নিখোঁজ ছিলেন। নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই- এটা আমি মেনে নিতে রাজি না। আমরা এখান থেকে বসে সর্বোত্তমভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। সংযোগ রক্ষা করেছি। খোঁজ-খবর নিয়েছি।'

তিনি বলেন, ইসিকে নির্ভর করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর। ইসিকে প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়, নির্ভরও করতে হয়। নিরপেক্ষ থাকতে তাদের বারবার বার্তা দেয়া হচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে তারা যে সহায়তা পাচ্ছেন, তা নির্ভরযোগ্য ও সন্তুোষজনক। 

৬ আসনে বিজয়ী হয়েছেন যারা: ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ লাঙল প্রতীকে ২৫ হাজার ৪৬৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬৯১ ভোট।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা রেজাউল করিম তানসেন। তিনি মশাল প্রতীকে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৬৪ ভোট। এ আসনে একতারা প্রতীকে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৭৪ ভোট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার কলার ছড়ি প্রতীকে ৪৬ হাজার ৩২৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ খান ভাসানী লাঙল প্রতীকে ৩ হাজার ২৩৮ ভোট পেয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান নৌকা প্রতীকে ৯৫ হাজার ৯৯০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার আপেল প্রতীকে পেয়েছেন ২৫ হাজার ৩৯১ ভোট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল ওদুদ নৌকা প্রতীকে ৫৯ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা সামিউল হক লিটন আপেল প্রতীকে ৫৫ হাজার ৯৮০ ভোট পেয়েছেন। 

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন