বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ভাঙা হচ্ছে ধানমন্ডি ৩২ এর দুই ভবন, উৎসুক জনতার ভিড়

ভাঙা হচ্ছে ধানমন্ডি ৩২ এর দুই ভবন, উৎসুক জনতার ভিড়

রাতভর ভাঙচুরে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাড়িটির অবশিষ্ট অংশও ভাঙার কাজ চলছে। এরই মধ্যেই একটি ভবনের অর্ধেকের বেশি এবং অন্য ভবনের ২০ শতাংশ ভাঙা শেষ হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এ কার্যক্রম দেখতে বাড়িটির সামনে ভিড় করছেন হাজার হাজার উৎসুক জনতা।

বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখ যায়, কেউ কেউ হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভাঙার কাজ পরিচালনা করছেন, কেউ আবার দাঁড়িয়ে দেখছেন। একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়ির দক্ষিণ পাশের ভবনটি ভাঙার কাজ চলছে।

এ সময় ফয়সাল করীম নামের একজন উৎসুক জনতা বলেন, এই বাড়িটিকে কেবলাই বানিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। আজ এটা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমরা চাই, এই জায়গায় একটা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ হোক।


তার কথার মাঝখানেই অন্য একজন বলেন, বাড়িটি ভেঙে আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হোক। কেউ কেউ আবার এই জায়গায় মসজিদ বানানোর দাবিও উত্থাপন করেন।


প্রসঙ্গত, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল দিনভরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-জনতা ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেন।



এদিন বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ধানমন্ডি ৩২ ভাঙার ডাক দেন বিদেশে অবস্থানরত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যও। তিনি লিখেন, ‘থাকবে না ৩২ নাম্বার থাকবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’


সন্ধ্যা সাতটার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ (বুধবার) রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে। 


এরপরই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসার সামনে এসে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। সে সময় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রবেশ মুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বাড়ির সামনে বুলডোজার আনা হয়। 


ভাঙচুরের আগে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আজকে ছাত্রলীগের ব্যানারে জাতির সামনে ভাষণ দেবে। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনও অস্তিত্ব রাখব না।’ 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর থেকেই বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।


সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন