সুইডেনের মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে (ইউএনএইচআরসি) নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। বুধবার জেনেভায় বিশ্বজুড়ে চলমান প্রতিবাদের মধ্যেই জাতিসংঘে এই নিন্দা প্রস্তাব পাস হলো।
এ প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশ ভোট দিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জানিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলজাজিরা। এতে বলা হয়, এটি মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ইউএনএইচআরসির টুইটার পেইজে পোস্ট করা চার্টে দেখা যায়, প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়া ১২টি দেশ হলো— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, রোমানিয়া, কোস্টারিকা, চেক রিপাবলিক, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ ও মোনটেনিগো। ভোটদানে বিরত ছিল বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, নেপাল ও পেরাগুয়ে।
বাংলাদেশসহ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সব দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
এর বাইরে চীন, ভারত, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোও এ প্রস্তাব সমর্থন করে ভোট দিয়েছে, এমনকি যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেন প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানকারী দেশগুলো হলো— আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গামিবিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিস্তান, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) হয়ে পাকিস্তানের আহ্বানে মঙ্গলবার থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মঞ্চে এই বিষয়ে বিশেষ ওই বৈঠক শুরু হয়। বেশ কয়েকটি দেশের বাধার মুখে মঙ্গলবার প্রস্তাবটি নিয়ে কোনো ভোটাভুটি করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার বিষয়টির ওপর ভোটাভুটি হয়। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে স্টকহোমের প্রধান মসজিদের বাইরে কোরআন পোড়ানোর এই ঘটনায় ওআইসিভুক্ত দেশগুলো উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছিল। একজন ইরাকি অভিবাসী ঈদুল আজহার ছুটিতে কোরআন পোড়ায়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মঙ্গলবার জাতিসংঘের সেই বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই এটি স্পষ্টভাবে দেখতে হবে যে এটি কী: ধর্মীয় ঘৃণার উসকানি, বৈষম্য এবং সহিংসতা উসকে দেয়ার চেষ্টা।
এ ধরনের কাজ সরকারি অনুমোদনে এবং দায়মুক্তির অনুভূতিতে ঘটেছে। বলেও মন্তব্য করেন বিলাওয়াল। পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ইরান, সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রীদের বক্তব্যেরই যেন প্রতিধ্বনি। ইসলামবিদ্বেষী কার্যক্রমকে হালকাভাবে নেয়া দেশগুলোর প্রতি ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার বন্ধ করুন। নীরবতা মানে অপকর্মের সহায়তা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক ইউএনএইচআরসিকে বলেন, মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম বা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কাজগুলো আপত্তিকর, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ভুল।
প্রসঙ্গত, সুইডিশ সরকার কুরআন পোড়ানোকে ইসলামোফোবিক বলে নিন্দা করেছে। তবে এও বলেছে যে দেশটির সংবিধান সমাবেশ, মতপ্রকাশ এবং বিক্ষোভের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। মঙ্গলবার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেরোম বোনাফন্ট উল্লেখ করেছেন, মানবাধিকার মানুষকে রক্ষা করে— ধর্ম, মতবাদ, বিশ্বাস বা তাদের প্রতীক নয়, এটি জাতিসংঘের জন্য বা রাষ্ট্রগুলির জন্য নয় যে পবিত্র কোনটি সংজ্ঞায়িত করা।