গ্রামবাংলার চির চেনা গাছ বটগাছ। যাকে ‘বৃক্ষরাজ’ বলেও অভিহিত করা হয়। বটগাছ ফাইকাস বা ডুমুর জাতীয় গোত্রের ইউরোস্টিগ্মা উপগোত্রের সদস্য। এর আদি নিবাস হলো বঙ্গভূমি (বাংলাভাষি অঞ্চল)। এটি একটি বৃহদাকার বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।
বটগাছকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। আগে গ্রামে কোনো মেলা বা অনুষ্ঠান করা হলে সবচেয়ে বড় বটগাছের নিচে আয়োজন করা হতো। এখনো কিছু কিছু জায়গায় হয়। তবে সময়ের বিবর্তনে সব আস্তে আস্তে হারিয়ে গেছে। বটগাছই ছিল গ্রামবাংলার মানুষের অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু। এ ছাড়া শিশুদের খেলা, সালিশি, বৈঠক সবই বটগাছের ছায়ায় হতো। শহরের মতো গ্রামে বড় বড় কনভেনশন হল, হোটেল, হলরুম নেই। তবে চির চেনা বটগাছই মানুষের এসব চাহিদা পূরণ করে আসছে যুগের পর যুগ।
বটগাছ যেন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক বাতাসের কেন্দ্রবিন্দু। বাতাস ও ছায়া দিয়ে গ্রামবাসীর শারীরিক ও মানসিক শান্তি প্রদান করে। সামাজিক গুরুত্বের পাশাপাশি বটগাছের রয়েছে ধর্মীয় গুরুত্বও। গাছকে ভারতে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায়ই এ গাছের নিচে মন্দির বানানো হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ধর্মীয় কারণে বটগাছ কাটা নিষিদ্ধ। এ গাছের উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে বটগাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।
বটগাছ শুধু মানুষের প্রয়োজনই মেটায় না। এ গাছ প্রায় সাড়ে তিনশ প্রজাতির পাখি ও কীটপতঙ্গের আশ্রয়স্থল। বটগাছের ফল কাক, শালিক ও বাঁদুড়ের প্রিয় খাদ্য। শকুনসহ এ জাতীয় পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বটের নানা রকম উপকারিতা রয়েছে। এ ছাড়া একটি পরিপূর্ণ বটগাছ গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ গ্যালন জলীয় বাষ্প ত্যাগ করে। যা একটি এলাকার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এর কষ থেকে নিম্নমানের রাবার তৈরি হয়। বাকলের আঁশ দড়ি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য। এর পাতা কুষ্ঠরোগে উপকারী। যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু বটগাছকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে কত শত সাহিত্য, কবিতা ও উপন্যাস। যা পাঠকের হৃদয়ে এখনো লালন করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ আধুনিকায়নের দিকে এগোচ্ছে। এখন মানুষ গাছপালা কেটে গ্রামেও বড় বড় দালান-কোঠা নির্মাণ করছে। যা আমাদের পরিবেশের জন্যও হুমকি।
আমরা আধুনিকায়নের নামে পরিবেশকে ধ্বংস ছাড়া কোনো উপকার করছি না। তাই আমাদের উচিত গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্যবাহী বটগাছকে সংরক্ষণ করা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা রকম কর্মসূচি পালন করা।