হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ঈদের দিন রাতে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুরান ঢাকার চকবাজারের ‘জাহাজ বাড়ি’। জাহাজের আদলে নির্মিত ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি
এখন শুধুই ইট-পাথরের স্তূপ। ভবন ভাঙার খবর পেয়ে বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে পুলিশ গিয়ে ভাঙা বন্ধ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাজী সেলিমের লোকজন ভবনটি ভেঙেছে। এ বিষয়ে হাজী সেলিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে পুলিশও স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি, যে কারা ভবনটি ভেঙেছে। ভবন ভাঙা বন্ধ করার সময় কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি পুলিশ। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
চকবাজার থানার ওসি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভবন ভাঙার খবর পেয়ে ভোররাত ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে যাই এবং ভবনটি ভাঙা বন্ধ করি। আমি যতটুকু শুনেছি অনেক পুরনো ঐতিহ্যবাহী দোতলা এই ভবনটি মদিনা গ্রুপের চেয়ারম্যান হাজী সেলিম কিনে নিয়েছেন।’ কারা ভেঙেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই জানে কারা ভেঙেছে।’ কাউকে গ্রেপ্তার করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু কোনো মামলা নেই তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ভাঙার কাজ বন্ধ এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। যেহেতু এটি জায়গা-জমির ব্যাপার, তাই এটি আদালতেই ফয়সালা হবে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতা হাজী সেলিমের লোকজন ঈদের দিন বুধবার রাতে হঠাৎ চকবাজারের এই ভবন ভেঙে ফেলে। ঘটনার পর বৃহস্পতিবার চকবাজার থানায় একটি জিডি করেছেন বলে জানান ঢাকার হেরিটেজ সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম। তিনি জানান, আরবান স্টাডি গ্রুপের পক্ষ থেকে করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৭ সালে পুরান ঢাকার ২২০০ ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপনার ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তাইমুর আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ভবনটি গত মার্চ মাস থেকে ভাঙার চেষ্টা চলছিল। তখন জিডি করে থানার সাহায্যে ভাঙা বন্ধ করা হয়। এবার এমন একটা সময়ে এমনভাবে করা হলো, যেন বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে। ঈদের ছুটিতে গোপনে কাজটি করা হয়েছে। থানায় জিডি করার পরের ভবনটি ভাঙা হয়েছে।’
তিনি জানান, গত সাত-আট মাসে আরবান স্টাডি গ্রুপের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টায় কিছু ভবন ভাঙার চেষ্টা ঠেকানো গেলেও এরই মধ্যে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ভাঙা হয়েছে। সে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এ বাড়ি।