দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার পর এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া জানান।
নির্বাচনের এই আয়োজনকে ‘ভোটরঙ্গ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জনগণ এটা বাস্তবায়ন হতে দেবে না। এই তফসিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'ইসির একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশে হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট।'
এদিকে নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে বলে উল্লেখ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রিত্বে থাকবেন, তার নেতৃত্বের সরকার থাকবে আর অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে-এটা ডাহা ভণ্ডামি ও মেকি। জাতি মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে সিইসি জাতির সঙ্গে মশকরা করেছেন। দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনাুমার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত রঙ্গ জনগণ মানে না।’
এই তফসিলে কোনো নির্বাচন বাংলাদেশের মাটিতে হতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারও হুঁশিয়ার করে বলেন, এই অবিমৃশ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। তার পুরো দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে, সরকারকে বহন করতে হবে। এই সংকটের জন্য ‘আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে’ চিরকাল দায়ী থাকতে হবে।
সরকার আবারও ‘গরুুছাগল’ দিয়ে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, পরপর তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রেখে আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর দেশকে নরকপুরীতে পরিণত করেছে। মানুষ তার ভোট ও ভাতের অধিকার এবং গণতন্ত্র ফিরে পেতে মরণপণ লড়াইয়ে রাজপথে নেমেছে। এই স্বৈরাচারী সরকার পতনের অতল গহ্বরে মুখে দাঁড়িয়ে দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ধাবিত করে পুনরায় গরুুছাগল দিয়ে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে।
নির্বাচন কমিশনকে বর্তমান সরকারের মনোনীত ‘সিলেকশন কমিশন’ বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তারা জনগণের কেউ নয়। এই কমিশনকে কেউ মানে না। নির্বাচন কমিশন জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি বেষ্টিত ইসি ভবনে বসে ‘আওয়ামী লীগের চেতনার নিশানবরদার’ সিইসি জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করল। অতীতে রকিব-হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়ালও দলদাসের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিরোধপূর্ণ নির্বাচনের চরম ধৃষ্টতা দেখানোর যে ঝুঁকি নিয়েছে, জনগণ এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভেবেছেন, তাঁর পা চাটা গোলামদের দিয়ে একটি ভোটরঙ্গ মঞ্চস্থ করবেন। কিন্তু তাঁর জেনে রাখা উচিত, এটা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সাল নয়। তফসিল দিলেন আর পুলিশি ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করবেন—এত সহজ নয়। নির্বাচনের একটি ঘোষণা দিলেন, আর নির্বাচন হয়ে গেল, এই দিবাস্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। এই তফসিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা।’