একাত্তরের ২ ডিসেম্বর মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখযুদ্ধের গতি বাড়ে। আর অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়ের পথে পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনেক মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
এদিকে পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছিল। মুজিব ব্যাটারির যোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে পঞ্চগড় আক্রমণ করায় তারা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়। এদিন চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ হানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী।
অন্যদিকে আখাউড়া, পঞ্চগড়, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে হানাদার বাহিনী পিছু হটে যায়। এতে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন লে. মাসুদ, সুবেদার খালেক, লে. মতিন, মেজর সদরুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার।
বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও দুটি পেট্রল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও হানাদার বাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্রুকে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলেছে। তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন। তা মেনে নেয়া যায় না। ভারত আর নেটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওইসব বৃহৎ দেশগুলোর ইচ্ছা অনুযায়ী নয়। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।