জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের কল্যাণে আলাদা একটি অধিদপ্তর গঠন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শিরোনামে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। অধ্যাদেশটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত এ অধ্যাদেশ। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে গেজেটে বলা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা ও ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) সংরক্ষণ করবে। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সরকারনির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সহায়তা দেবে। শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের কল্যাণে তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশি–বিদেশি সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এই অধিদপ্তর।
অধ্যাদেশে বলা হয়, এই অধিদপ্তরের সদর দপ্তর হবে ঢাকায়। সরকার প্রয়োজন মনে করলে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিযুক্ত করবে।
অধ্যাদেশটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটি এত দিন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি বিশেষ সেল হিসেবে কাজ করে আসছে। তারা শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করে আসছে। বিলুপ্ত সেলের যেকোনো কাজ বা কোনো ব্যবস্থা জারি করা কোনো আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি এই অধ্যাদেশের জারি বলে গণ্য হবে।
এতে বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের একটি তহবিল থাকবে, যা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ এবং জুলাই যোদ্ধাকল্যাণ ও পুনর্বাসন তহবিল’ নামে অভিহিত হবে। এই তহবিলে সরকারের অনুদান সাহায্য ও মঞ্জুরির অর্থ জমা হবে। কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এই তহবিলে অনুদান দিতে পারবে। কোনো বিদেশি সরকারি সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা এই তহবিলে অনুদান দিতে পারবে।
অধিদপ্তর জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। শহীদদের গণকবর ও সমাধি সংরক্ষণ এবং স্মৃতিফলক স্থাপন করতে পারবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা যেকোনো শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করে বা বিভ্রান্তিকর কাগজপত্র দাখিল করে নিজেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি করে এই অধ্যাদেশ বা প্রণীত বিধি বা আদেশ বা নির্দেশের অধীনে কোনো চিকিৎসাসুবিধা বা আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসনসুবিধা দাবি করেন বা গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)–এ বর্ণিত অপরাধ সংঘটন করলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উপধারা (১)–এ উল্লিখিত গৃহীত সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।