শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

নজরদারীতে ডিসি এসপি

নজরদারীতে ডিসি এসপি

❏ এমপির সঙ্গে ছবি, যোগদানের আগেই ওসি প্রত্যাহার
❏ ১৯ পুলিশ পরিদর্শককে হলেন এএসপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে তিন জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), দুই বিভাগীয় কমিশনার ও পাঁচ জেলার এসপি পদে পরিবর্তন করেছে সরকার। দেশব্যাপী আরও ডিসি-এসপিদের নিয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্তে নেমেছে ইসি। পাশাপাশি ‘নজরদারিতেও’ রাখা হচ্ছে তাদের। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একাধিক প্রার্থী ডিসি-এসপিদের নামে অভিযোগ দিয়েছেন। এসব অভিযোগও আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে ইসি।

এদিকে  নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেশের ৩৩৮ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলির সুপারিশ করা হয়। এর আওতায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমানকে শ্রীপুর থানায় বদলির আদেশ দেয়া হয়। ওই আদেশে ফয়েজুর রহমানকে শ্রীপুর থানায় বদলিও করা হয়। তবে রোববার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই শ্রীপুর থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আদেশের পরদিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-কালিয়াকৈর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের বাসভবনে সস্ত্রীক ওই ওসির সাক্ষাতের ছবি ভাইরাল হয়। এরপর থেকে ওই আসনের ভোটার ও সচেতন ব্যক্তিরা ওই ওসিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী অধ্যাপক রুমানা আলী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে শ্রীপুর থানায় নতুন পদায়ন করা ওসি ফয়েজুর রহমানকে এ থানা থেকে বদলির দাবি জানান। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমানকে শ্রীপুর থানায় যোগদানের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ফলে শ্রীপুর থানায় যোগদানের আগেই মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়।

অন্যদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯ জন পুলিশ পরিদর্শককে পদোন্নতি দিয়ে এএসপি করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান এ সংক্রান্ত চিঠি জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের এই সদস্যদের যে বদলি/পদোন্নতি তালিকা দেয়া হয়েছিল, কমিশন তাতে অনুমোদন করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ১৯ জন ‘পুলিশ পরিদর্শক’ হতে ‘সহকারী পুলিশ সুপার’ পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করায়, পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির আগে প্রস্তাবিত কর্মস্থলে বদলি/পদায়নের লক্ষ্যে অনাপত্তি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অনাপত্তি প্রদান করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসির তদন্তে যদি প্রমাণ হয় এসপি-ডিসি কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করছেন, তবে বদলি করা হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাঠে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, ডিসি-এসপিদের এমন কোনো আচরণ দেখা গেলে দ্রুত সময়ে বদলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত বিষয়টি চলমান রাখতে চায় ইসি।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ডিসি-এসপিদের বদলি এখন নতুন কিছু না, চলমান প্রক্রিয়া। কমিশনের চোখে নিরপেক্ষ না হলে বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করলেই প্রত্যাহার করা হবে। কোনো ডিসি-এসপির বিপক্ষে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করবো। তদন্তে যদি প্রমাণ হয় ওই ডিসি-এসপি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন, তাহলে বদলি করা হবে। তদন্তে প্রমাণ হলেই আমরা ব্যবস্থা নেবো।

ইসি জানায়, যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এ বিষয়ে তদন্ত করছে ইসি। এমন একাধিক এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে। তাদের বিষয়েও তদন্তে নেমেছে ইসি। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পৃথক চিঠি দেয় কমিশন।

জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বেশিরভাগই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের অনেক কর্মকর্তা একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে অনেকের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশন এ পদেক্ষপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের জেলার এসপিকে বদলি করা হয়। মেহেরপুরের সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ সুপার মো. রাফিউল আলম গত ২৯ মাস ধরে মেহেরপুরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একইভাবে সামনে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এলাকার এসপি-ডিসিকে বদলি করা হতে পারে বলে জানায় ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান জেলায় জেলায় গিয়ে মাঠপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে ইউএনও এবং থানার ওসিদেরও ডাকা হয়। চার কমিশনার জেলায় জেলায় সফরে গিয়ে মাঠপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষপাতের অভিযোগ পান। বিষয়টি নিয়ে কমিশনে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন তারা। সেখানে বড় ধরনের রদবদলের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। এরই মধ্যে বরিশাল ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পাঁচজন এসপি, তিনজন ওসি ও একজন জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।রোববার সকালে ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনার আলাদা আলাদা চিঠি জননিরাপত্তা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে দুই পুলিশ কমিশনারসহ হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক এবং মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর ও শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও (ওসি) প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের স্থলে উপযুক্ত কর্মকর্তাকে পদায়ন করার জন্য বলেছে ইসি।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন