শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

তৃতীয় পক্ষ থেকে সাবধান

ফাইল ছবি

❏ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সভায় সিইসি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে যাবতীয় পদক্ষেপের মধ্যে ‘তৃতীয় পক্ষ’ যাতে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ঢাকা বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় এই নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বৈঠক শেষে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার, সে বিষয়ে সিইসি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে কোনো সহিংসতা না হয়, এবং তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে এবং সমস্যা সৃষ্টি করলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।

৭ জানুয়ারি ভোট সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ২৭টি নিবন্ধিত দল এখন নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত থাকলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করে ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তাদের হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচির মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে নাশকতা। 

সেই প্রসঙ্গ টেনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অন্যান্য জাতীয় নির্বাচনের সময় অংশীজন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একমুখী সমস্যা থাকে, সেটা হল প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তার সমর্থকদের আচরণ বিধি মানতে বাধ্য করা, সহিংসতা এড়াতে যে সমস্ত কার্যক্রম নিতে হয় সেগুলো। এবারের নির্বাচনে আরেকটি অতিরিক্ত, সেটি হচ্ছে আতঙ্ক, শঙ্কা সৃষ্টি করার একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দুয়েকটি দলের আহুত প্রোগ্রামকে সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ এই সমস্ত শঙ্কাগুলো মোকাবেলা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তোলার মত একটি অবস্থান, ক্যাপাবিলিটি, সবকিছুই তাদের রয়েছে। এজন্য প্রস্তুতিও রয়েছে।

দুদিন আগে হরতালের মধ্যে ঢাকায় ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, কেবল একটি নাশকতা নয়। বিশেষ করে অক্টোবরের ২৮ তারিখের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জ্বালাও, পোড়াও ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এর বেশিরভাগই কিন্তু পুলিশ উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের তৎপরতা চলছে। বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। 

এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। ট্রেনে যাতে না করতে পারে, এবং অন্যান্য স্থাপনায় যাতে না করতে পারে সেজন্য পুলিশ সজাগ রয়েছে। অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের সঙ্গে রয়েছে। ট্রেনে, ট্রেনের লাইনে যাতে না হতে পারে, সেজন্য আনসারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের মত সমালোচনা যাতে না হয়, সেজন্য এবার দুর্গম এলাকা বাদে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ভোটের সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার জানান, ইসির নির্দেশনা মানতে সকলে আসলে বাধ্য। যারাই ইসির অধীনে কাজ করছে, তারাই এটি মেনে নিয়েছে যে, নির্বাচনি অন্যান্য উপকরণ আগের দিন যাবে, সকালে যাবে ব্যালট। সকলের প্রচেষ্টা থাকলে এই ভোটযুদ্ধ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারব। উৎসবমুখর ভোটের আয়োজন করতে পুলিশ অনেকখানি সফল হয়েছে। সবাই একসাথে হয়ে একটি উৎসবমুখর ভোট উপহার দিতে পারব।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন করতে গেলে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো নিয়ে মতবিনিময় সভায় আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি ইসির পরিকল্পনাগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

আমাদের পক্ষ থেকেও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির পাশাপাশি সমন্বয় করার জন্য বলেছি। যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলেছি। একে অপরকে শেয়ার করার জন্য বলেছি। যাতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সময় মত ব্যবস্থা নিতে পারে। ঘটনা ঘটার আগেই যেন না ঘাটানোর (প্রতিরোধের) ব্যবস্থা নিতে পারে।

আইন শৃঙ্খলাবাহিনী থেকে শুরু করে ভোটে সম্পৃক্ত সবাই যেন ‘সততা, নিরপেক্ষতার সাথে এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে’ নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান মো. আলমগীর।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় প্রতিযোগিতামূলক ভোট উত্তেজনাকরও হতে পারে। আনন্দের উত্তেজনা যাতে বিষাদের উত্তেজনা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রার্থী-সমর্থকদের বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন