পাহাড়ি ঝরনার স্বচ্ছ জলে ভেসে থাকা পাথরগুলোর দিকে তাকালে হঠাৎ চোখে পড়ে চকচকে সাদা কিছু। দূর থেকে মনে হয় যেন কেউ নদীর তলদেশে মুক্তার মালা বিছিয়ে রেখেছেন। আসলে এগুলোই সাদা পাথর, যার সৌন্দর্য আর ব্যবহার দুই-ই চমকপ্রদ। প্রকৃতির এই অপার সৃষ্টি আমাদের চোখকে আরাম দেয়, মনকে আনন্দ দেয়।
সাদা পাথর আসলে কী? সাধারণত চুনাপাথর বা লিমস্টোন এবং ডলোমাইট জাতীয় খনিজের উপস্থিতিতেই পাথর সাদা রং ধারণ করে। ভূতাত্ত্বিকভাবে এসব পাথর গঠিত হয় কোটি কোটি বছর আগে, সামুদ্রিক জীবের খোলস, প্রবাল কিংবা অন্যান্য ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ উপাদান জমে জমে শক্ত হয়ে। এদের রং সাদা হয় মূলত ক্যালসিয়ামের উচ্চমাত্রার কারণে, যা আলোর প্রায় সব তরঙ্গ প্রতিফলিত করে। ফলে পাথর দেখতে একেবারেই শুভ্র মনে হয়।
বাংলাদেশে সাদা পাথরের মূল ভান্ডার বলতে সিলেট অঞ্চলই সবার আগে আসে। প্রথমেই আমরা বলতে পারি জাফলংয়ের কথা। মেঘালয়ের পাহাড়ি নদী থেকে ভেসে আসা সাদা চুনাপাথরের টুকরো এখানে সহজেই চোখে পড়ে। স্থানীয়রা এগুলো সংগ্রহ করে গৃহস্থালি নির্মাণ, সজ্জা ও চুন তৈরিতে ব্যবহার করেন।
এরপর বলা যাক ভোলাগঞ্জের কথা। সীমান্তঘেঁষা এ জায়গায় নদীর ধারে সারি সারি পাথরের মধ্যে সাদা পাথর সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। বিছনাকান্দিতেও আছে দৃষ্টিনন্দন সাদা পাথর। যেখানে একসঙ্গে পাহাড়, নদী আর পাথরের মিলনস্থল। ভারতের পাহাড়ি ঢল বেয়ে নেমে আসে প্রচুর পরিমাণে সাদা চুনাপাথর।
বলা যায়, তামাবিল-ডাউকি নদীপথের কথা। স্বচ্ছ জলে নিচের সাদা পাথরের আস্তরণ এখানে আসা পর্যটকদের জন্য আলাদা আকর্ষণ। চুনাপাথর শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, শিল্পক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। সিমেন্ট তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে চুনাপাথর অপরিহার্য। এ ছাড়া চুন তৈরিতে, ভাস্কর্য নির্মাণে এবং রাস্তার পিচের সাথে মিশ্রণ হিসেবেও ব্যবহার হয়।
সাদা পাথরের প্রতি মানুষের মুগ্ধতা নতুন কিছু নয়। এর শুভ্রতা যেন ভালোবাসার প্রতীক। পাহাড়ি স্রোতে ধুয়ে যাওয়া মসৃণ সাদা পাথর হাতে নিলে মনে হয় প্রকৃতি যেন নিজের আঁচল থেকে এক টুকরো উপহার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আর সেই শান্তি খুঁজতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে যায় সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি কিংবা তামাবিলের পথে।
প্রকৃতির এ উপহার শুধু অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে না, আমাদের মনকেও করে শান্ত ও নির্মল ও স্বচ্ছ। ঠিক যেন সাদা পাথরের মতো। এই সাদা পাথর রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। আমাদের উচিত প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া।