শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

হেরে যাওয়ার ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছে না সরকার: মঈন খান

হেরে যাওয়ার ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছে না সরকার: মঈন খান

ক্ষমতা হারানোর ভয়েই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, আজকে যদি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগ হয়ত ভয় পাচ্ছে, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। সে কারণেই তো তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছে না। যে যত কথাই বলুক না কেন, মূল কারণ তো এটাই। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মঈন খান।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি খোলাখুলিভাবে আওয়ামী লীগের কাছে প্রশ্ন করছি, আপনাদের ভয় পাবার কারণ কী? এই নির্বাচনটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করেন, দেখবেন যে পরবর্তী সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে এমনই হতে পারে যে, বাংলাদেশের মানুষ আবার খুশি হয়ে আপনাদেরকে ভোট দেবে।

বাংলাদেশের মানুষের যে চরিত্র এবং তাদের মনস্তাত্ত্বিক যে অবস্থা, সেটা আপনারা উপলব্ধি করে বাংলাদেশে আপনারা রাজনীতি করুন, আমি তাদের কাছে এই অনুরোধ জানাব। নির্বাচনের আর আট দিন বাকি থাকলেও মঈন খান মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের জন্য সরকারের হাতে এখনো সময় আছেন।

তিনি বলেন, ৭ তারিখ অনেক দূরে আছে, কথায় আছে দিল্লি দূর অস্ত। আপনারা ভাবুন, চিন্তা করুন, আলোচনায় বসুন, সংলাপ করুন। এই হিংসাত্মক সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। আপানাদেরকে অনুরোধ এই কারণে যে, আপনারা সরকারে আছেন, কাজেই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে দায়িত্ব সেটা কিন্তু সরকারের ওপর বর্তায়।

মঈন খানের কথা হল, দেশের স্বার্থে সংঘাত বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে ফিরে আসতে হবে। এদেশের মানুষ যে কারণে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল, সেই গণতন্ত্রকে আমরা যাতে বাংলাদেশে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি, আমি আজকে সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবদুল মঈন খান সংবামাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সংবাদপত্রকে ফোর্থ স্টেট বলা হয়। বিলেতে দি কিং, দি চার্চ অ্যান্ড দি পিপল, তারপরে তাদের যে জবাবদিহিতা জনগণের কাছে রাজার এবং তখনকার দিনে চার্চ একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ছিল, তাদের যে জবাবদিহিতা সেটা নিশ্চিত করার জন্য এসেছিল সংবাদপত্র।

এই কারণে আধুনিক বিশ্বে সংবাদপত্রের গুরুত্ব এত বেশি। সংবাদপত্র বলুন, পরবর্তিতে টিভির কথা বলুন, আজকে সোশাল মিডিয়ার কথাই বলুন, যা কিছু বলুন না কেন, তাদের একটি গুরু দায়িত্ব, সেটা হল যারা দেশ পরিচালনা করে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি বলেন, সেই জবাবদিহিতা করতে হবে কোথায়? জনগণের কাছে। বলা বাহুল্য এই কারণে কিন্তু বিশ্বের প্রায় সব সরকার সংবাদপত্রকে ভয় পায়। মিডিয়া সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। মিডিয়ার হাতে বন্দুক নাই। ২৮ অক্টোবর দেখেছেন রাইফেল নাই, বুলেট নাই, টিয়ারগ্যাস নাই, সাউন্ড গ্রেনেড নাই, কিন্তু তাদের হাতে যে জিনিসটা আছে, তা হচ্ছে কলম। এই কারণে আজকের আধুনিক বিশ্বে... দি মিডিয়া ক্যান ডু অ্যান্ড আনডু আ গভার্নমেন্ট। বন্দুকের দরকার হয় না এবং সেই কারণে পৃথিবীর প্রায় সব সরকার মিডিয়াকে ভয় পায়।

সরকারের সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, আজকের বাংলাদেশে কিন্তু সরকার আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। এখন যেটা হচ্ছে সেটা হল টোটালিটারিয়ান। তারা কিন্তু শুধু মানুষকে বাধা দিচ্ছে না…. এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না...। আরো একধাপ এগিয়ে বলছে যে, তোমাকে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে, সেটা করতে হবে। কিন্তু আজকের যে পরিবেশ-পরিস্থিতি, সেখানে কিন্তু মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। কোনো আধুনিক সমাজ এভাবে বাসবাস করতে পারে না।

আমি কঠিন একটা কথা বলব, ১৭৭১ সাল থেকে শুরু করে আড়াইশ বছর পেরিয়ে গিয়ে আজকের সরকার কি মানবসভ্যতার পেছনের দিকে হাটছে? সংবাদপত্রের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ভূমিকা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিশ্চিত হয়েছিল, আজকে আমরা সেই সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরেছি। তাদেরকে এই সরকার বলছে যে, তোমরা কথা বলতে পারবে না।

সাংবাদিকদের মধ্যকার বিভেদ-বিভক্তি দূর করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মঈন খান।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন