আজ ১ জানুয়ারি। নতুন বছরের প্রথম দিন আজ। বিদায়ী বছর ২০২৩ সালের সকল দুঃখ বেদনা ভূলে গিয়ে এবং নতুন বছরের নতুন আশা-আকাঙ্খা ও উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ববাসীর সঙ্গে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রোববার মধ্যরাতে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় পুরো জাতি। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশেষ করে যুব সমাজ মধ্যরাতে ১২ টা ১ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গে নববর্ষের বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনে মেতে উঠে। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় ইংরেজী নববর্ষ ২০২৪ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে দেশের মানুষ ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য বার্তা পাঠানো মাধ্যমে তাদের প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধবদের শুভ কামনা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্টীয় নতুন বছর উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, আজ আমরা যে সময়কে পেছনে ফেলে নতুন দিনের আলোয় উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছি, সে সময়ের যাবতীয় অর্জন আমাদের সম্মুখ যাত্রার শক্তিশালী সোপান হিসেবে কাজ করছে। তাই নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণের সোপান রচনা করার অনুপ্রেরণা।
২০২৩ সাল বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক স্বর্ণযুগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সেতুতে রেল যোগাযোগের শুভ উদ্বোধন করেছি। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চালুর পর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা সম্প্রসারণ করেছি।’
আমাদের অন্যান্য মেগা ও মাঝারিসহ সকল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করেছি। ৫ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করেছি। ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং ১৯ অক্টোবর দেশের ৩৯টি জেলায় ১৫০টি সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস একসাথে উদ্বোধন করেছি। ২৮ অক্টোবর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছি। ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল চালু করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচন হতে পরপর তিন দফা জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে গত ১৫ বছরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি।
এদিকে নতুন বছর মূলত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বছর। এরমধ্যে রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি নজর সরকারের। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলমান উত্তেজনার ফলে দেশজুড়ে নাশকতার শঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় রাজনীতি ও আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। আর এই দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশজুড়ে নাশকতা হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। আর এরফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে এসব চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্যদিকে সাধারণত নববর্ষকে সামনে রেখে সারা বিশ্বে বিদায়ী বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষুদ্র দেশ টোঙ্গা, কিরিবাতিতে ২০২৩ সালকে প্রথম বিদায় জানানো হয় এবং নতুন বছরকে বরণ করা হয়।
সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন অফিস ও নানা সংগঠনও প্রতিবছর তাদের প্রিয়জনদের বরণ করে নিয়ে থাকেন। দিনটিকে তারা বিদায়ী বছরের সফলতা ও ব্যর্থতাকে পূর্নবিবেচনা করে এবং নতুন বছরে নতুন লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য পরিকল্পনা করে। একই সঙ্গে তারা নতুন বছরে অসম্পূর্ণ কাজগুলোকে সম্পন্ন করার প্রয়োজন সে কাজগুলোকে চিহ্নিত করে।
দেশের অবকাঠামো, অর্থনীতি, কৃষি, আইটি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করাসহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ২০২৩ সালকে বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নববর্ষ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য নানাভাবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করছে।
সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ২৭ ডিসেম্বর দলের নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করেছেন।
বৈশ্বিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন এবং গাজা যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা স্বত্বেও বিদায়ী বছরের বাংলাদেশে অনেক যুগান্তকারী উন্নয়ন সূচিত হয়েছে। যা আগামী বছর দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যাপক সহায়তা করবে।