❏ পুলিশের কাছে ছাত্রদল নেতার স্বীকারোক্তি ❏ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত বিজিবি
❏ মাঠে থাকবে আনসারের পাঁচ লাখের বেশি সদস্য
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন ‘কোনো কিছুর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে’ আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনার তথ্য পুলিশ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। নাশকতাকারীদের ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমাদের প্রস্তুতিও নিয়েছি। আমি আশা করি এ ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি তারা করতে পারবে না। নাশকতাকারীরা পরিকল্পনা করেছিল বিকট শব্দে আওয়াজ কিংবা ককটেল ফুটিয়ে মানুষের মাঝে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আমরা আশা করি, তারা যত পরিকল্পনাই করুক, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। রোববার ভোট সামনে রেখে শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক ব্রিফিংয়ে কথা বলছিলেন আইজিপি।
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে নাশকতা ঠেকাতে বিজিবি সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়েছেন এ বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
তিনি বলেছেন, সারা দেশে বিজিবির র্যাপিড অ্যাকশন টিম, ডগ স্কোয়াড কাজ করছে। পাশাপাশি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ প্রস্তুত আছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সদস্যরা প্রস্তুত আছে। এমনকি প্রয়োজনে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে কোনো দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমরা প্রস্তুত আছি। গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা সাদা পোশাকে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি অনলাইনে গুজব ঠেকাতেও কাজ করছে বিজিবি। শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বিভিন্নস্থানে দায়িত্বপালনরত বিজিবি সদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে মিরপুরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাজমুল হাসান।
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক। শুক্রবার খিলগাঁওয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তায় এসব আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৫০ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা ১ হাজারটি সেকশনে বিভক্ত হয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন রয়েছে।
নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, কেউ নাশকতা করতে পারবে না। চোরাগোপ্তা দুয়েকটা জায়গায় করতে পারে। সারাদেশে নাশকতার চেষ্টা হয়েছে, তবে তারা কোথাও সফলভাবে কোনো কার্যক্রম করতে পারেনি। আমরা সকলে মিলে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি উপহার দিতে সক্ষম হব৷
এবার নির্বাচনে না গিয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে বিএনপি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘর্ষের পর থেকে হরতাল-অবরোধের ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে তারা। সবশেষ ভোটের আগের দিন শনিবার সকাল ৬টা থেকে ভোটের পরদিন সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে দলটি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এ দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী এবং নির্বাচনের জন্য দেশবাসী উন্মুখ হয়ে আছেন। দলে দলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে। ভোট উৎসবে হরতালকারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে আমার মনে হয়।
সকল কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকলে একসঙ্গে একযোগে কাজ করছি। স্থানীয় প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার ও সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে এক প্ল্যাটফর্মে এসে কাজ করছি। কোথাও নাশকতার চেষ্টা করলে তার ফলাফল ভালো হবে না। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাশকতা করার জন্য তাদের বেশ কিছু পরিকল্পনার বিষয় আমরা জানতে পেরেছি। সেই আলোকে আমরা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায় থেকে নাশকতাকারীদের বিষয়ে প্রতিনিয়ত আমরা তাদের ইনফরমেশন পাচ্ছি।
সম্প্রতি মাগুরায় এক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ঘটানোর বেশ কিছু তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন।
নির্বাচনে গুজব প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সাইবার ওয়ার্ল্ডে কাজ করছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছি।দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট, নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসসহ আমাদের সকলের মাঝে একটি সুষ্ঠু সমন্বয় রয়েছে। আমরা আপনাদেরকে নিকটস্থ থানায় বা পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ আপনারা যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের টিম সহায়তার জন্য আপনাদের পাশে দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যাবে।