ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দেয়ায় ভোটারদের ‘অভিবাদন’ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জনগণকে ভোট বর্জন করতে বলেছি। তারা এর যথার্থতা উপলব্ধি করে এই নির্বাচন বর্জন করেছে, আমরা তাদের স্যালুট (অভিবাদন) জানাই।’ রোববার দুপুরে গুলশানে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান মঈন খান। তিনি বলেন, বিএনপির ভোট বর্জন আন্দোলন সফল হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও ভোট দিতে যাননি।
বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, বিশ্বের মানুষ দেখছে, দেশের মানুষ দেখছে, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ বর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘আজকে শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে নয়, আমরা যারা এই প্রহসনের নির্বাচনকে বর্জন করেছি, তাদের সবার পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের মানুষকে স্যালুট জানাব। একটি মাত্র কারণে যে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো দিন আপস করেনি।’
শেষ অবধি ভোট পড়ার হার কত শতাংশ হবে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, ‘সেটা আমাদের কনসার্ন না। সরকার ৫ শতাংশ বলতে চাইলে ৫ বলবে, ৫০ শতাংশ বলতে চাইলে ৫০ বলবে, ৯৯ শতাংশ চাইলে ৯৯ বলবে।’ তিনি বলেন, এমনকি সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো একটি কেন্দ্রে ১০৫ শতাংশও ভোট পড়েছে বলেও বলতে পারে। কী ভোট হচ্ছে, সেটা সারা বিশ্ব দেখছে, বাংলাদেশের মানুষ দেখছে।’
এ প্রসঙ্গে দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচন কমিশনের ব্রিফিংয়ের উল্লেখ করেন মঈন খান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি ব্রিফিং করে বলেছে, ৪ ঘণ্টায় ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট কাস্ট (ভোট পড়া) হয়েছে। জানি না, দশমিক পর্যন্ত তারা কীভাবে হিসাব করে ফেলেছে।’
মঈন খান বলেন, আজকে যদি নির্বাচন কমিশন বিশাল প্রেস কনফারেন্স করে বলে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, তার প্রতিবাদ করার কোনো রাস্তা বাংলাদেশে আছে? তারা যেটা বলবে, সরকার যেটা বলে, সেটাই নাকি সত্য।
এই পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লোকেরাও ভোট দিতে যাননি বলে উল্লেখ করেন মঈন খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভোটাররা জানেন, তাঁদের প্রার্থী বিজয়ী হয়ে গেছেন। এখন খামোখা ভোটকেন্দ্রে যাবেন কেন। সেই কারণে আজকে ভোটকেন্দ্রে ভোটারশূন্য অথবা নগণ্যসংখ্যক ভোটার দেখা গেছে।
মঈন খান বলেন, ‘দেশের মানুষের আকুতি হচ্ছে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে পেতে চায়। আমরা সেই লক্ষ্যে আন্দোলন করছি। এই পর্যন্ত আমাদের কাছে যে খবর, তা হচ্ছে বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র আছে। এর সিংহভাগ কেন্দ্রে ভোটার নেই।’
বিএনপির ভোট বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, ‘নিশ্চয়ই সফল হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, এই আন্দোলন শুধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ যে লগি–বইঠার আন্দোলন করে, সেই লগি–বইঠার আন্দোলন আমরা করি না। আমাদের অনেকে অভিযোগ করেছে যে আপনারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে সরাতে পারবেন না। কারণ, তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল, তাদের যে কার্যপদ্ধতি, তাদের যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া… গত ১৫ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখ বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে, ৫০ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পৃথিবীতে ২০০টি দেশ আছে, আপনারা কি দেখাতে পারবেন, যেখানে এ রকম ঘটনা ঘটেছে।’
এবারের নির্বাচনকে সরকারের পাতানো এবং একপেশে বলে মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, তারা একটা ভুয়া নাটক সাজিয়েছে, ২০১৪ সালেও নাটক সাজিয়েছিল। বলেছিল বিএনপি নাকি আইএস হয়ে গেছে, বিএনপি নাকি তালেবান হয়ে গেছে, বাস্তবতা হচ্ছে, এটা বিদেশিদের বোঝাতে ওদের একটা অপপ্রচার ছিল, সেটাতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
মঈন খান বলেন, ‘সর্বশেষ আমি বলব, বিগত এক সপ্তাহে বিশ্বের যতগুলো নামকরা মিডিয়া ও পত্রিকা আছে, সেসব মিডিয়াতে যেকোনো রিপোর্ট দেখুন না কেন, সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে, এই নির্বাচনে একটিমাত্র সরকারি দল। তারা নিজেরা অথবা তাদের ডামি প্রার্থী দিয়ে এখানে নির্বাচনটি করছে, এটা একটা ভুয়া, একটা প্রহসনের নির্বাচন।’