❏ অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে, একটু সময় দিন: অর্থমন্ত্রী
❏ সরকার কোনো চাপে নেই, পূর্ব-পশ্চিম সবার সঙ্গে কাজ করব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
❏ নিজে দুর্নীতির ধারেকাছে যাইনি, ছাড়ও দেব না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
❏ মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস ছিল রোববার। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর আজই প্রথমে সচিবালয়ে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে আসেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন তারা। তাদের শুভেচ্ছা জানাতে সচিবালয়ে ছিল অতিরিক্ত মানুষের চাপ। মন্ত্রণালয়গুলোর দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের সুহৃদ-শুভাকাঙ্ক্ষীরা এসেছিলেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে। সচিবালয় প্রাঙ্গণে অনেককে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যেতে দেখা যায়। শুভেচ্ছা জানাতে আসা ব্যক্তিরা অনেকেই এসেছিলেন গাড়িতে করে। ফলে সচিবালয়ে আজ গাড়িরও অতিরিক্ত চাপ ছিল। প্রথম দিনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
আওয়ামী লীগ এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন। ওই দিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিদায়ী মন্ত্রিসভার ৩০ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। ফলে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ এসেছেন। এ ছাড়া আগের মন্ত্রিসভার কয়েকজনকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হলেও কারও কারও মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হয়েছে। এ কারণে এগুলোতেও নতুনেরা এসেছেন।
অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে, একটু সময় দিন: অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বিষয়গুলো বুঝতে তার ‘একটু সময়’ প্রয়োজন। রোববার প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের চারজন সচিব ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় করেন নতুন অর্থমন্ত্রী। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর নিজে প্রায় ২৫ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি।
কূটনীতিক হিসাবে নিজের দীর্ঘ কর্মজীবন এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মাহমুদ আলী বলেন, চ্যালেঞ্জ ছিল, চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, তা সমাধান করতে হবে। রাতারাতি সব সংকট দূর করা যাবে না। বিষয়গুলো বুঝতে একটু সময় দিন। অর্থনীতির ছাত্র মাহমুদ আলী রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন পেশাদার কূটনীতিক। তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন কিছুদিন। এখন এমন এক সময়ে তাকে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাল ধরতে হচ্ছে যখন রেকর্ড মূল্যস্ফীতিতে জনজীবনে কষ্ট বেড়েছে, ডলারের দর আর রিজার্ভ সঙ্কট হয়ে উঠেছে সরকারের বড় মাথাব্যথা। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে সুশাসনের জন্য সংস্কারের আহ্বান অনেক বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে।
মত বিনিময়ে তিনি বলেন, রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সময় দিতে হবে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ মন্ত্রণালয় একা পারবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করব। রাতারাতি সব কিছু ঠিক করা যাবে না৷ তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধে কাজ করা হবে। টাকার মূল্য কমে গেছে। সেটা নিয়েও কাজ করা হবে। এ বিষয়ে দেখি কি করা যায়। করোনাভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে, সে কারণে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। জটিল ওই সময়ে অর্থমন্ত্রীর ভূমিকায় আ হ ম মুস্তফা কামালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। বয়স আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর বাজেট ঘোষণার সময় খুব বেশি সাবলীল ছিলেন না মুস্তফা কামাল। সে সময় তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গত সরকারে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো এম এ মান্নান।
সে কারণে অনেকের ধারণা ছিল, শেখ হাসিনার নতুন সরকারে এবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে মান্নানকে দেখা যতে পেরে। কিন্তু তাদের দুজনই শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ভার দিয়েছেন পুরনো আস্থাভাজন আবুল হাসান মাহমুদ আলীর হাতে।
দিনাজপুর-৪ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত সরকারে না থাকলেও তার আগে দুইবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নবগঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহমুদ আলী, ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের নির্বাচনকালীন সরকারে মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করলে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
পাঁচ বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মাহমুদ আলী। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল বিনিময় তার সময়েই হয়। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়াদে মন্ত্রিত্ব না পেলেও অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদ আলী। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এবার অর্থমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন।
সরকার কোনো চাপে নেই, পূর্ব-পশ্চিম সবার সঙ্গে কাজ করব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশি-বিদেশি সব চাপ উতরে নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। আমরা সবার সঙ্গে কাজ করব। সবাই আমাদের উন্নয়ন অংশীদার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রোববার প্রথমবার মন্ত্রণালয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও চাপ অনুভব করছি না। নির্বাচন নিয়ে চাপ, গভীর চাপ, মধ্যম চাপ আরও নানা ধরনের চাপ ছিল। সব চাপ উতরে নির্বাচন হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা কখনো কারও কোনো চাপ অনুভব করিনি।
নির্বাচন নিয়ে সব দেশে কমবেশি প্রশ্ন থাকে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে সব দেশে কমবেশি প্রশ্ন থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক এসেছেন। তাদের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ভালো একটা নির্বাচন হয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, তোমাদের দেশের চেয়ে ভালো হয়েছে? তখন তিনি বলেছেন, আমাদের দেশেও নির্বাচনের পর নানা প্রশ্ন থাকে। আপনাদের ভালো নির্বাচন হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পর পরাজিত প্রার্থীর কথা বলতে গেলে বলতে হয়, নাচতে না জানলে উঠান বাঁকার মতো। আমাদের দেশে একটি ভালো ও উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সহিংসতা মুক্ত হয়েছে এ নির্বাচন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চ্যালেঞ্জের। তবে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতিতে অটল থাকবে। পৃথিবী বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা নীতিতে অটল আছি এবং থাকব। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ নীতি মেনেই আমরা চলব। সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের নানা পর্যবেক্ষণ থাকে। কিন্তু দিন শেষে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন বন্ধু দেশের কনসার্নকে আমরা মূল্য দিই। নবম জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। প্রথম বারই তাকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পৌনে সাত মাস দায়িত্ব পালন শেষে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয় হাছান মাহমুদকে।
পূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করে নতুন চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে কাজ করতে কোনো অসুবিধে নেই। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে। অর্থনৈতিক কূটনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হবে। বাজারটাকে বাড়াতে হবে। সবার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে হবে। কাজ করতে গেলে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। তখন আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব। পূর্ব-পশ্চিমের সব রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বাজার সম্প্রসারণ এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা থেকে রেমিট্যান্স আসার বিষয়টি দেখতে হবে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে চ্যানেলগুলো অবারিত করা, সহজ করতে হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করতে চান উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মধ্যে আছি। আশা করি, কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান হবে। আমরা কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে বিশ্বাস করি না। আমরা কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করব।
নিজে দুর্নীতির ধারেকাছে যাইনি, ছাড়ও দেব না: স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির কথা জানেন উল্লেখ করে নতুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, তিনি নিজে কখনো দুর্নীতিতে জড়াননি। আর এই বিষয়ে তিনি ছাড়ও দেবেন না। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী হিসেবে শপথের পর দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে যোগ দেন খ্যাতনামা এই চিকিৎসক। সকালে সচিবালয় আসার পর মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাসচিব, পরিচালক, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকসহ কর্মকর্তারা মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। মন্ত্রী সবার সঙ্গে পরিচিত হন।
এরপর সাংবাদিকদের সামন্ত লাল বলেন, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির কথা আমিও জানি। আমি চেষ্টা করব। এটুকু বলতে পারি, দুর্নীতির ব্যাপারে আমি জিরো টলারেন্স। আমি নিজেও কখনও দুর্নীতির ধারেকাছে যাইনি। আমি এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ‘তুমি (কাজ) কর। যদি কোনো অসুবিধা হয় আমাকে টেলিফোন কর।’ আমি সেটাই করব। গত ৭ জানুয়ারির ভোটের তৃতীয় দিনে বুধবার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নামগুলো জানানো হয়। ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর ভিড়ে চমক ছিল সামন্ত লাল সেন নামটি।
তিনি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে দেশের পরিচিত মুখ। দেশে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়নের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এর আগে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কও ছিলেন। শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ফোন নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে হঠাৎ করে একটা ফোন পেলাম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছ থেকে। বললেন, ‘আমি সচিব বলছি। উনার নম্বরটা আমার মোবাইলে সেইভ করা ছিল। আমি ভাবলাম কোনো রোগীর বিষয়ে কথা বলবেন হয়ত। উনি বললেন যে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে কলাপ্স (নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা) করে যাচ্ছিলাম যে এ কী বলছে! আমি চিন্তা করছিলাম যে এটা কি সত্যি নাকি কোনো ভুয়া টেলিফোন। পরে যখন টেলিভিশনে দেখলাম তখন নিশ্চিত হলাম যে সত্যিই।
মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে: সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স হলে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সবসময় একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। ইউক্রেন-রাশিয়া ও ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে বাজার ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়েছে। যার প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্মার্ট বাজার সিস্টেম করতে চাই। সরবরাহের সময়টা কমিয়ে আনতে চাই। বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণায়ের সমন্বয়ে একটি টিম থাকবে। এটা কোনো চিঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করব, এটাই আমাদের মিরাকল। আর আমরা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করব। আগামী জুন মাসে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এটা অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি।
সিন্ডিকেট ভাঙতে কী কাজ করবেন জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোক্তার জন্য কাজ করছি। এটার নিশ্চয়তাতেই আমার ম্যান্ডেট এসেছে। মানিকগঞ্জের ফুলকপি যেন একই দিন রাতে গৃহিণীর হাতে আসতে পারে, সেটার নিশ্চয়তাই হবে ম্যাজিক। সঠিক সরবরাহ মূল লক্ষ্য। যে প্রস্তুতি আছে, এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, কোনো ঘাটতি নেই। পরিবহন ও বড় বাজার ব্যবস্থাপনা যথাযথ করাই লক্ষ্য।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। কিছু লোক এ ধরনের কাজ করে থাকে। বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট টুলস রয়েছে। কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব না, জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, আজকের দরদামকে বেইজ ধরে আমরা কাজ করতে চাই। মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করব। কৃত্রিম সংকট যারাই করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। পুঁজিবাজারে সিন্ডিকেট করতে দিইনি, এখানেও আমি সিন্ডিকেট করতে দেব না। স্বচ্ছভাবে যারা ব্যবসা করবে তাদের সহযোগিতা করা হবে। আর যারা কৃত্রিমভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আহসানুল ইসলাম বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য টিসিবি থেকে ১ কোটি পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তেল, চিনি, ডাল, আলু ও পেঁয়াজের পাশাপাশি রমজান মাসে ন্যায্যমূল্যে ছোলা ও খেজুর বিতরণ করা হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং বাড়ানো হবে।