দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিনে সারাদেশে কালো কর্মসূচি হিসেবে পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি। তবে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে তাদের মিছিল পণ্ড হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকায়ও সাতটি জায়গায় এই মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলপূর্ব সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, সব জেলা ও উপজেলা শহর এবং মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করা হবে। জনগণকে নিয়ে এই অবৈধ সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধ করতে হবে। কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, ‘অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ এই কর্মসূচি পালন করা হবে। দুপুর ২টায় রাজধানীর সাতটি স্থান থেকে এই মিছিল বের হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া একই দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা পৃথকভাবে কালো পতাকা মিছিল করবে। বিএনপির দপ্তর থেকে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির তিনটি ও দক্ষিণের চারটি জায়গা থেকে কালো পতাকা মিছিল বের হবে। এর মধ্যে মহানগর উত্তর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর, মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড ও শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে মিছিল করবে। আর মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার, যাত্রাবাড়ীর কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সূত্রাপুরের দয়াগঞ্জ মোড় ও ধানমন্ডির নিউমার্কেটের সামনে মিছিল করবে ।
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, উত্তরায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও মিরপুরে সেলিমা রহমান, শাহজাদপুরে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া মতিঝিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নিউমার্কেট এলাকায় নজরুল ইসলাম খান, দয়াগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যাত্রাবাড়ীতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে কবরস্থানের পাশে বিএনপি ঘোষিত কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি ছিল। তাই পুলিশি হেফাজতে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মঈন খানকে আটক করা হয়নি। তবে কালো পতাকা মিছিল থেকে ৮-১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এর আগে ‘অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত কালো পতাকা মিছিলের প্রারম্ভেই পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানকে পুলিশ ঘেরাও করে গাড়িতে তুলে নেয়। পরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ বেশ কয়েকজন নারী নেতাকর্মীকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নেতাকর্মীকে হেফাজতে নেয়া হয়।
উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাউদ্দিন বলেন, কর্মসূচি থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানকে আটক করা হয়নি। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি ছিল। তাই তাকে পুলিশি হেফাজতে গাড়িতে করে এগিয়ে দিয়েছি। পরে তার গাড়ি এসে তাকে নিয়ে গেছে।
মঈন খানের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলছেন, কিন্তু পুলিশ তাকে যেভাবে গাড়িতে তুলে নেয়, তা হেনস্তার মতো মনে হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে এডিসি বলেন, আমার জানা মতে মঈন খানের সঙ্গে কোনো প্রকার মানহানিকর আচরণ করা হয়নি। পুলিশ সদস্য যারা ছিলেন, তারা পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তার ব্যক্তিগত ঝুঁকির কথা চিন্তা করে তাকে এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা তাকে পুলিশি হেফাজতের মধ্য দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।
মঈন খানকে ঝুঁকির বিষয়টি জানানো হয়েছিল কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরে তাকে জানানো হয়েছে। তার ব্যক্তিগত ঝুঁকি ছিল।
এডিসি মির্জা সালাউদ্দিন বলেন, বিএনপির কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির কোনো অনুমতি ছিল না। রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তারা এখানে পতাকা মিছিলের জন্য কোনো প্রকার অনুমতি নেননি। তারা এখানে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। আমরা তা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। এখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এটি করেছি।
কর্মসূচির অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি বলেন, এটি একটি আবাসিক এলাকা। এটি এভিনিউ রোড, কিছু কমার্শিয়াল স্পেসও রয়েছে। এখানে জনমানুষের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়ে বিবেচনা করেই কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হয়নি।