শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জোর করে চুল কাটায় আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধের পরিচয় মিলেছে

জোর করে চুল কাটায় আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধের পরিচয় মিলেছে

ময়মনসিংহের তারাকান্দার কোদালিয়া গ্রামে সম্প্রতি প্রকাশ্যে জোর করে চুল কেটে দেওয়া হয় এক বৃদ্ধের। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি বৃদ্ধটির। নিরুপায় হয়ে রাগে-দুঃখে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তুই দেহিস’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটির একটি ভিডিও ভাইরালও হয়েছে ইতোমধ্যে। সেইসঙ্গে এবার পরিচয়ও মিলেছে সেই বৃদ্ধের। 

ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, টুপি-পাঞ্জাবি পরা তিন ব্যক্তি বাজারে বাউল ফকিরের মতো দেখতে ব্যক্তির চুল কেটে দেওয়ার সময় বয়স্ক এ মানুষটি অনেকক্ষণ চেষ্টা করেন নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। এক পর্যায়ে দৌড়েও পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। না পেরে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ, তুই দেহিস।’

ভুক্তভোগী বৃদ্ধের নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। ময়মনিসংহের তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্থানীয়রা তাকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন।

কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, হালিম উদ্দিন ফকির। পাগল কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্ত নন। দীর্ঘ ৩৪ বছর মাথায় জট ছিল তার। হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরানের (র.) ভক্ত তিনি। আগে পেশায় কৃষক থাকলেও এখন ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি করেন। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তাকে দৌড়ে ধরে জোরপূর্বক মাথার জট, দাড়ি ও চুল কেটে দেন। ঘটনার সময় আশপাশের মানুষ বাধা না দিয়ে বরং তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। সম্প্রতি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর হালিম উদ্দিন ফকিরকে দেখতে ভিড় জমান বিভিন্ন এলাকার মানুষ। 

ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন বলেন, ‘চার মাস আগে সকালে কাশিগঞ্জ বাজারের একটি দোকানে বইছিলাম। কোদালিয়ার একটা লোক আমারে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কই যাও। তহন কইলাম বাড়িঘরে যাই। ওই লোক মোবাইল বাইর কইরা টুপি পাঞ্জাবি পরা লোকদের খবর দেয়। খবর পায়ে ওনারা আইসা আমারে টেনেহিঁচড়ে বাইর কইরা জোর কইরা মাথার জটা চুল ও দাড়ি কাইটা দেয়। আমার তো অতো শক্তি নাই। ৮-১০ জনে ধইরা আমারে ফালায়া দিয়া মেশিন দিয়ে চুল কাটছে। হেই সময় আমি বেহুশ হয়া গেছিলাম। ওই ঘটনার পর থেকে কাজকাম ভালো লাগে না। তারা ভেবেছিল, আমি পাগল। আমি তো পাগল নই, ফকির। কবিরাজ করি।’

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরও বলেন, সিলেটের হযরত শাহজালালের মাজারে যাওয়ার পর থেকে তিনি কোনদিন চুল কাটেননি। তার চুলের বয়স ছিল আনুমানিক ৩০ বছর। হঠাৎ করেই এই ব্যক্তিরা জোর করে চুল কেটে দেওয়ায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন। 


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ