ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকেরই হঠাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হাইপারগ্লাইসেমিয়া।
সাধারণত মানসিক চাপ, অতিরিক্ত খাবার, শারীরিক পরিশ্রম না করা, সংক্রমণ কিংবা ওষুধের অনিয়মে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি, না হলে তা ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসের মতো জটিলতায় রূপ নিতে পারে। এই জটিলতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে -- বমি করা, পেটব্যাথা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, মূত্রত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, এবং কিছু ক্ষেত্রে চেতনা হ্রাস পাওয়া। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার কারণে এই রক্ষণগুলো দেখা দিলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
তাই জেনে নিন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে বাড়িতেই তাৎক্ষণিক কী করবেন-
১. বেশি করে পানি পান করুন
শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে রক্তে শর্করা আরও বেড়ে যায়। এছাড়া পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বাড়তি গ্লুকোজ বের করে দিতে সাহায্য করে।
২. হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম
যদি দুর্বলতা না থাকে, তবে ঘরে হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং করলে শরীর শর্করা ব্যবহার করার সুযোগ পায়। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কিছুটা কমে।
৩. দারুচিনি চা
২০১৯ সালে জার্নাল অব ডায়াবেটিস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে পারে। তাই অল্প দারুচিনি গরম পানিতে ভিজিয়ে চা হিসেবে খেতে পারেন।
৪. মেথি ভেজানো পানি
বাংলাদেশে প্রচলিত এই উপায়টি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে অনেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পারে। রাতে এক চা চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে পানিটা খেলে উপকার মেলে, বলছে ফাইটোথেরাপি রিসার্চ, ২০১৭।
৫. করলা বা করলার রস
২০২০ সালে প্রকাশিত জার্নাল অব এথনোফার্মাকোলজিতে বলা হয়েছে, করলায় থাকা পলিপেপটাইড-পি নামের উপাদান ইনসুলিনের মতো কাজ করতে পারে। তবে কাঁচা করলার রস একেবারে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো, এতে অনেকের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।
তবে এসব ঘরোয়া উপায় শুধুমাত্র সাময়িকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এগুলো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়।
তাই রক্তে শর্করার মাত্রা যদি প্রায়ই বেড়ে থাকে, বমি, মাথা ঘোরা বা শ্বাসকষ্ট থাকে - তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে কখনই ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ পরিবর্তন করবেন না।
মনে রাখবেন, নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, সঠিক ডায়েট মেনে চলা, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমই আসল ঘরোয়া উপায়।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন গাইডলাইন (২০২৪), বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, জার্নাল অব ডায়াবেটিস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (২০১৯), ফাইটোথেরাপি রিসার্চ (২০১৭), জার্নাল অব এথনোফার্মাকোলজি (২০২০)
ডেস্ক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম
























