বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

সদকার মহাশক্তি: গুনাহ মোচন ও বিপদ নিরসনের সমাধান

সদকার মহাশক্তি: গুনাহ মোচন ও বিপদ নিরসনের সমাধান

মানুষের জীবন চলার পথে ভুল-ত্রুটি ও গুনাহের ছায়া পড়বেই। আবার পার্থিব জীবনে নানা বিপদাপদও আসে। কিন্তু ইসলাম আমাদের জন্য রেখেছে পরিত্রাণের সহজ ও কার্যকরী পথ—সদকা। এটি শুধু দান-খয়রাত নয়, বরং এক শক্তিশালী আধ্যাত্মিক অস্ত্র, যা গুনাহকে ভস্মীভূত করে, মসিবতকে প্রতিহত করে এবং বান্দাকে তার প্রভুর অসীম রহমতের দিকে নিয়ে যায়। কোরআন-হাদিসের অকাট্য দলিলে সদকার এই মহাশক্তি প্রমাণিত, যা প্রতিটি মুমিনের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। 


পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা

আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসুলকে মান্য করো, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।’ (সুরা নূর: ৫৬)

‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা ভালো; আর যদি গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্থকে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভালো; এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন।’ (সুরা বাকারা: ২৭১)

‘অতএব, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, শ্রবণ করো, আনুগত্য করো এবং ব্যয় কর তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য; আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য হতে রক্ষা করা হয়; তারাই তো সফলকাম।’ (সুরা তাগাবুন: ১৬)

‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় ও কৃপণতার আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার কথা দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা: ২৬৮)

‘বলুন, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিজিক বাড়িয়ে দেন, (যাকে ইচ্ছা) কমিয়ে দেন। আর তোমরা যা কিছুই দান করো, তিনি তার জায়গায় অন্য কিছু দিয়ে দেন। আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা: ৩৯)

‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা চর্চা করে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের পালন কর্তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৬২)


রাসুল (স.)-এর সুন্নতের শিক্ষা

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন-

‘সদকা গুনাহ নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি: ২৬১৬)

‘দান-খয়রাত আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমানজনক মৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬৬৪)

‘তোমরা অধিক হারে সদকা করো। কেননা বালা-মসিবত সদকাকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (বায়হাকি ৮০৮৩)

‘কোনো দান-সদকাই সম্পদে ঘাটতি সৃষ্টি করে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)

‘বান্দা যতক্ষণ নিজ ভাইয়ের সহযোগিতা করে, ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সহযোগিতা করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯)

‘প্রতিদিনই দুজন ফেরেশতা নেমে আসেন। তাদের একজন দোয়া করেন- আল্লাহ! যে দান করে তাকে আপনি আরও দিন। অপরজন দুআ করেন- আল্লাহ! যে ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখে, তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন।’ (সহিহ বুখারি: ১৪৪২)

‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে এক মুষ্টি খেজুরও দান করে, আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। এরপর তা ওই ব্যক্তির জন্য পরিচর্যা করতে থাকেন—যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চার পরিচর্যা করে। ওই সামান্য পরিমাণ খেজুর বাড়তে বাড়তে এক সময় পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়।’ (বুখারি: ১৪১০; মুসলিম: ১০১৪)

‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন। (সুনানে তিরমিজি: ২৪৪৯)


আলেমদের বক্তব্য

ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) বলেছেন, বিপদ-আপদ প্রতিহতের ক্ষেত্রে সদকার বিশেষ প্রভাব আছে। এমনকি কোনো পাপাচার, জালিম কিংবা কাফিরও যদি সদকা করে, আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা তার থেকে বিপদ দূর করে দেন। আর যুগ যুগ ধরে এটা পরীক্ষিত সত্য। (আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব: ১/৩৮)

কোরআন-হাদিসের অকাট্য দলিল প্রমাণ করে, গুনাহ মোচন ও মসিবত থেকে সুরক্ষা পেতে সদকা একটি কার্যকরী অবলম্বন। তাই তওবা ও ইস্তেগফারের পাশাপাশি নিয়মিত সদকা করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই মহান ইবাদতের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ