❏ সেনাবাহিনীকে দিয়ে পিপিপির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পিএমএল-এন!
❏ জোট গঠনে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সাথে পিটিআইয়ের চুক্তি
পাকিস্তানে নির্বাচন হয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চললো। এখনো নিশ্চিত হয়নি কারা আসবে সরকারে। কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট গঠনই হয়ে উঠেছে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র উপায়। এই আলোচনায় এগিয়ে রয়েছে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন এবং বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি। তবে ক্ষমতা ভাগাভাগির কৌশল নিয়ে এখনো একমত হতে পারেনি তারা। এরফলে দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে পাকিস্তানের কারান্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান গহর আলী খান বলেছেন, কেন্দ্র এবং প্রদেশগুলোতে জোট গঠনে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের (এসআইসি) সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে পৌঁছেছে পিটিআই। এই চুক্তির বিষয়টি সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) দাখিল করা হবে। ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। তিনি বলেছেন, জাতীয় পরিষদে ৭০টি এবং সারা দেশে ২২৭টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এসব আসন কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বণ্টন করা হয়।
গহর খান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে পৌঁছেছি। এই চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের দলের সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থীরা এসআইসিতে যোগদান করবেন। আমরা ইসিপির কাছে এই চুক্তির নথিপত্র উপস্থাপন করবো।
তিনি বলেন, দলের শক্তি ও আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আমরা ইসিপির কাছে আবেদন করবো। গহর খান বলেন, আমাদের দলের সমর্থিত প্রার্থী; যারা জাতীয় পরিষদ, খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে বিজয়ী হয়েছেন, তারা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দেবেন।
পিটিআইয়ের এই নেতা বলেন, ‘পিটিআইয়ের প্রার্থীরা আমাদের কাছে তাদের হলফনামা জমা দিয়েছেন এবং তাদের সম্মতিতে আজ আমরা ঘোষণা করছি যে, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগদান করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খানের দলের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আইয়ুব খানও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তার দল দেশে ঐক্য চায়। যে কারণে পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা কেন্দ্র ও সব প্রদেশে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পাকিস্তানি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের তথ্যমতে, গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এককভাবে সর্বোচ্চ ৯৩ আসনে জয়ী হয়েছেন ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৪ আসনে জিতেছে পিএমএল-এন। ৫৪ আসন পেয়ে তৃতীয় হয়েছে পিপিপি।
এ অবস্থায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোটের ঘোষণা দেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির বাবা ও পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারি। এ সময় তার পাশে ছিলেন অন্যান্য দলীয় প্রধানরাও।
জারদারি জানান, জোটবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছয়টি দল। সেগুলো হলো — পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ), বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) এবং ইস্তেহাকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি (আইপিপি)। তবে এরপর প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে পারেনি এই জোট। সরকার ও সাংবিধানিক পদগুলোর কে কোনটি দখলে রাখবে তা নিয়ে চলছে তীব্র দরকষাকষি। প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পরিষদের স্পিকারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে নিজেদের লোক বসাতে চায় পিপিপি। তবে কোনো মন্ত্রিত্ব নিতে রাজি নয় তারা।
বিপরীতে, পিএমএল-এন চায় প্রধানমন্ত্রীর পদ তাদের থাকুক। পাশাপাশি, জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নিক পিপিপি। মূলত এগুলো নিয়েই এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি পিএমএল-এন এবং পিপিপি।
এ অবস্থায় বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, জোট সরকার গঠনে সময়ক্ষেপণের ‘পরিণতি’ সম্পর্কে পিপিপি এবং পিএমএল-এন নেতৃত্বকে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
পিপিপি’র অভ্যন্তরীণ সূত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের কাছে স্বীকার করেছে, পিএমএল-এনের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য দলটি ‘ব্যাপক চাপের’ সম্মুখীন হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি সন্দেহপ্রকাশ করেছে, জোট সরকারে যোগদানে পিপিপি’কে বাধ্য করার জন্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নিজেদের প্রভাবকে কাজে লাগাতে পারে পিএমএল-এন।
এমন চাপের মুখে পিপিপি কী করতে পারে সে বিষয়ে ওই নেতা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় দলটি পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। সেক্ষেত্রে পিপিপির সামনে আরেকটি সুযোগ আসতে পারে, তা হলো দলের কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব।
তিনি বলেন, পিপিপি নেতারা হয়তো জনসম্মুখে বলেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না। কিন্তু এই সুযোগ যদি নিজেই তাদের সামনে এসে হাজির হয়, তাহলে সেটি হাতছাড়া করার সম্ভাবনা কম।