বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় দীর্ঘ ১৯ বছর পর সুদান থেকে দেশে ফিরেছেন মো. ময়নুল হক। তিনি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার তালুক বাজিত গ্রামের রজ্জব আলীর ছেলে।
রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ আর্মির ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্ট এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ (UNISFA)-তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন, ব্যানব্যাট-৩ এর একটি টহলদল আবেই বাজার এলাকায় হঠাৎ এক বাংলাদেশি (ময়নুল হক) নাগরিকের সন্ধান পায়।
জানা যায়, প্রায় ১৯ বছর পূর্বে ঠিকাদারির কাজে সুদানের রাজধানী খার্তুমে পাড়ি জমান ময়নুল। কিন্তু হঠাৎ শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ তার জীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়। বহুদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর প্রাণ বাঁচাতে তিনি পলায়ন করে চলে আসেন আবেই অঞ্চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এসময় তিনি হারান পাসপোর্টসহ সমস্ত বৈধ নথিপত্র, যার ফলে দেশে ফেরা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাৎ পেয়ে তার দেশে ফিরে আসার প্রবল আকুতির কথা জানান। এ প্রেক্ষিতে আবেইতে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তার দেশে ফেরার আবেদন সেনাসদরে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে আবেদনটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে গত ১৫ আগস্ট ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস কর্তৃক উক্ত ব্যক্তির বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের নিমিত্তে ‘ট্রাভেল পারমিট’ ইস্যু করা হয়।
এছাড়া ময়নুলের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে দূতাবাস কর্তৃক বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিমান ভাড়া এবং আনুসাঙ্গিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এরপর গত ২৯ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবেই হতে বিমানযোগে জুবা, সাউথ সুদানে আগমন করেন। জুবা, সাউথ সুদান হতে তিনি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযোগে আজ (রোববার) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকায় অবতরণ করেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর সুদানের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং তার পরিবারের সাথে মিলিত হতে পেরে ময়নুল হক খুবই আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটকে পড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিকের দেশে প্রত্যাবর্তনের মতো মানিবক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ আনন্দিত ও গর্বিত। যেকোনো প্রয়োজনে দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম



















