বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

নিজ শহর মাশহাদে রাইসিকে দাফন

নিজ শহর মাশহাদে রাইসিকে দাফন

❏ বাংলাদেশে একদিনের শোক পালিত

ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ ইব্রাহিম রাইসির লাশ মাশহাদে ইমাম রেজার (আ.) মাজার কমপ্লেক্সে দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টকে শেষবিদায় জানাতে মাশহাদ পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। খবর রেডিও তেহরান, এপি, আলজাজিরার। প্রেসিডেন্ট রাইসির জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে। মৃত্যুর ৪ দিন পর বৃহস্পতিবার মাশহাদেই জানাজা শেষে শিয়াদের অষ্টম ইমাম রেজার মাজারে তাকে লাশ দাফন করা হয়। ইরানে রাইসি হলেন প্রথম রাজনীতিবিদ যাকে এ মাজারে দাফন করা হলো।

এর মধ্য দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভূতপূর্ব শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাইসির জানাজায় বিভিন্ন দেশের নেতা, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও অংশ নেন। রাইসিকে শেষ বিদায় জানাতে সকাল থেকেই রাজধানী তেহরান থেকে ৭৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মাশহাদে জড়ো হতে থাকেন লাখো মানুষ। শহরের রাস্তায় রাইসির বড় বড় ছবি, কালো পতাকা এবং শিয়াদের নানা প্রতীক টানানো হয়। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট রাইসির মরদেহ ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে পৌঁছানোর পর শেষ বিদায় জানাতে জনসমুদ্র কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় লাখ লাখ জনতার সবার হাতে হাতে ছিল প্রেসিডেন্ট রাইসির ছবি এবং বিভিন্ন বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড। শোকার্ত ইরানিরা সবাই বুক এবং মাথা চাপড়ে (আনুষ্ঠানিকভাবে শিয়াদের শোক প্রকাশ) প্রিয় নেতার জন্য শোক প্রকাশ করেন। 

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশের বিরজান্দে নেওয়া হয় রাইসির মরদেহ। সেখানেও তাকে শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ।  এছাড়া, ইরানের পররাষ্ট্রন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের লাশ বৃহস্পতিবার তেহরানের অদূরে রেই শহরের ইমামজাদা আব্দুল আজিমের (আ.) মাজার এলাকায় দাফন করা হয়েছে। রেই শহরেও তার শেষবিদায় অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

সোমবার সকালে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকায় ইরানি প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় অনুসন্ধানী দল। দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি, পূর্ব আজারবাইজানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম, প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান মেহেদি মুসাভি। প্রাণ হারিয়েছেন হেলিকপ্টারের পাইলট, কো-পাইলটও।

এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে আজ বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বাংলাদেশ। শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। এ দিন নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার জন্য বাংলাদেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হচ্ছে। গত রোববার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর সোমবার ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজের খবরে বলা হয়, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তিনি শহীদ হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য ব্যক্তিরা নিহত হয়েছেন।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন