রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সারাদেশে ভারি বর্ষণ, ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা

সারাদেশে ভারি বর্ষণ, ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার দেশজুড়ে ভারি বর্ষণে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হয়েছে। আরও ২৪ ঘণ্টা এই ভারি বষর্ণ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর বুধবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্বল হয়ে স্থল নিস্নচাপে পরিণত হওয়ার পর মোটামুটি সারাদেশেই বিরাজ করছে; এর ফলে মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। ২৮ তারিখের পর একটু একটু করে দেশের তাপমাত্রা বাড়বে। এ মাসে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই, তবে জুনে বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক দফা থাকতে পারে অল্প সময়ের জন্য। সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশেসর্বোচ্চ ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। এ সময়ে ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭১ মিলিমিটার। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। রোববার নেত্রকোণা ও সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

রাজধানীতে সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। মিরপুরের কালশীতে সকাল থেকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাদের। ভারি বৃষ্টির ফলে তাদের অনেকেই ভিজে যান, কেউ কেউ আশ্রয় নেন ফ্লাইওভারের নিচে। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাহিরা জান্নাত। তিনি সেখানকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তাহিরা বলেন, ছাতায় মানছে না এমন বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক ভিজে গেলাম। তারমধ্যে গাড়ি পাচ্ছি না। কখন গাড়ি পাব, কখন অফিসে যাব বৃঝতেছি না। সিএনজিও পাচ্ছি না। এভাবে ভিজে তো ঠান্ডা লেগে যাবে। এসময় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা না গেলেও মিরপুরের কালশী থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত বেশ জনজট ছিল।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাখালীর কাঁচাবাজার এলাকা থেকে মগবাজার যাওয়ার জন্য অটোরিকশা খুঁজছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জয়নুল আহমেদ। এটুকু দুরত্বের জন্য চালক ২৫০ টাকা ভাড়া দাবি করেন, বাধ্য হয়ে তিনিও যেতে রাজি হন। সাধারণত ১০০-১৫০ টাকায় অন্যান্য দিন সেখানে যাওয়া যায়।

এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে হাঁটু থেকে বুক পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ এলাকা। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কম। ফলে রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনে অর্ধভেজা হয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া চলমান থাকায় নগরের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। সোমবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, ডিসি রোড, নাসিরাবাদ, নগরীর তিনপুলের মাথা, মুরাদপুর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, ২ নম্বর গেইট, মেহেদীবাগ, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, প্রবর্তক মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। কোনো কোনো জায়গায় কোমর পানিও জমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূল সড়কগুলো হাঁটু থেকে কোমর কিংবা অনেক স্থানে বুক সমান পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের পাশের অধিকাংশ দোকানপাট সব বন্ধ রয়েছে। অনেক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার সড়কে গণপরিবহন একেবারেই নেই। চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট যেতে টেম্পু ভাড়া পাঁচ টাকা। অথচ এখন আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা। এছাড়া, রিকশাগুলোও তিনগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে।

হালিশহরের গ্রিনভিউর বাসিন্দা সানাউল্লাহ জানান, 'বৃষ্টির পানিতে আমার বাসার নিচতলা ডুবে গেছে। বাসা পরিস্কার করতে এই বর্ষণমুখর দিনে লোকজন পাওয়া দুষ্কর। পানিতে তলিয়ে গেছে বাসার সব কটি কক্ষ। এতে আসবাবপত্র এবং খাট-সোফা নষ্ট হয়ে হওয়ার আশংকা করছি। 

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতাকে দায়ি করেন এই বাসিন্দা। তিনি বলেন, সরকার সারাদেশে নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। অথচ এখানকার কমিশনার কিংবা চসিকের কর্মকর্তারা হালিশহরের ড্রেনগুলো পরিস্কার কেন করে না সেটা আমার বোধগম্য না। এমন দুর্যোগে জলাবদ্ধতা হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু প্রতি বর্ষায় এমন চিত্র হালিশহরবাসিকে দেখতে হয়।   

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিক প্রকল্পে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। এত টাকা ব্যয় হলেও সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে চট্টগ্রাম।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী। হালিশহরে সমাজকর্মী মুজিবুল মাওলা রনি বলেন, ‘আমাদের আশপাশের এলাকা ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টির চট্টগ্রামের হালিশহরে পানিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়। মানুষের বাসাতে পানি প্রবেশ করে। এত টাকা খরচের কোনো সুফল জনগণ পাচ্ছে না। ভোগান্তি দূর করতে আরও মনযোগী হতে হবে চসিককে। এছাড়া এখানকার খালগুলোকে আধুনিকায়ন এবং আবর্জনা মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। 

অন্যদিকে, মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত  চট্টগ্রামে ২৩৮.৪ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। 

গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এর প্রভাবে রোববার বিকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে দুর্বল হয়ে আসে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন