বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

হঠাৎ ঢাকা-১০সহ তিন আসনে বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা

হঠাৎ ঢাকা-১০সহ তিন আসনে বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার ২৭৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মাত্র একটি বাদে বাকি ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানই পড়েছে ঢাকার মাত্র তিনটি সংসদীয় আসন এলাকায়।

ঢাকায় মোট ২০টি সংসদীয় আসন আছে। নির্বাচনের আগে সেখান থেকে কেন শুধুমাত্র তিনটি এলাকায় এই বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, এখন সে প্রশ্ন সামনে আসছে। যে ২৭৪টি মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শশ্মান এবং কবরস্থানে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ও বরাদ্দ বিশ্লেষণ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা। 

এতে দেখা গেছে, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই সংসদীয় আসন ঢাকা-০৯, ঢাকা-১০ এবং ঢাকা-১১ এলাকায়।

শুধুমাত্র তিনটি সংসদীয় আসন এলাকাতেই কেন এত বরাদ্দ দেওয়া হলো— এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিবিসি দেখতে পেয়েছে, ২৭৪টির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ১৪৫টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরের অবস্থান ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ এবং নিউ মার্কেট এলাকায়। ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে মাত্র সপ্তাহ খানেক আগেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এই ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন।


প্রায় কাছাকাছি সময়ে ওই সংসদীয় আসনের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরে তার মন্ত্রণালয় থেকেই কেন সিংহ ভাগ বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলো, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে সে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেছেন, ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাদের সুপারিশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। 


এদিকে, ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরাদ্দের বাকি ১২৮টি প্রকল্প অন্য যে দুইটি আসনে দেওয়া হয়েছে সেই দুইটি হলো ঢাকা-০৯ এবং ঢাকা-১১ আসন। ঢাকার ওই দুইটি আসন থেকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা অংশ নিচ্ছেন।


তাহলে কি ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতারা ঢাকার যেসব আসনে নির্বাচন করবেন শুধুমাত্র সেসব এলাকার মসজিদ মাদ্রাসায় ভোটের আগে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সময় তো শেষ হয়ে যায়নি। সারাদেশের অন্য অনেক জায়গায়ও তো বরাদ্দ গেছে।


নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর আর এই ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া যায় না। আগামী ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। ভোটের আগে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের নৈতিক ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।


স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে জেলা পরিষদে এডিপি হিসেবে বিশেষ কিছু আসনের জন্য যে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু।


ঢাকায় মোট ২০টি আসন। নির্বাচনের তফসিলের আগে সেখান থেকে তিনটি সংসদীয় এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার পেছনে কারণ কি এনসিপি নেতা ও ছাত্র উপদেষ্টার নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা দেওয়া? এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, কেউ বরাদ্দের জন্য যদি আবেদন না করে, তাহলে তো আমরা সেধে গিয়ে তার বরাদ্দ দিতে পারবো না। ওইসব এলাকা থেকে নিশ্চয়ই কেউ আবেদন করেছে, তার প্রেক্ষিতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


তিনি অবশ্য এটিও জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের আরো কিছু প্রতিষ্ঠানে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হবে। 


তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসলাম বলছেন, উন্নয়ন বরাদ্দ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, এ জন্য আমরা স্থানীয় সরকার কমিশন থেকে সুস্পষ্ট প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। সেটি যদি বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ