বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে ডিবি

ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে ডিবি

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আখতারুজ্জামান শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরাতে ভারতের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় ভারতের মাধ্যমে তাকে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।

আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কলকাতায় গিয়েছিলেন হারুনসহ তিন কর্মকর্তা। পাঁচ দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শাহীনকে ফেরানোর প্রশ্নে হারুন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই, কিন্তু ভারতের সঙ্গে আছে। তাদের মামলারও মোস্ট ওয়ান্টেড আখতারুজ্জামান শাহীন। আমরা তাদের রিকোয়েস্ট করেছি (শাহীনকে ফেরানোর বিষয়ে)। তারা বলেছেন, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে।

গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আবার আমরা আমাদের আইজিপির মাধ্যমে ইন্টারপোলকে অবহিত করেছি। আর ঢাকায় যে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা আনঅফিসিয়ালি সাহায্য চাইব।

কলকাতা সফর ‘সফল’ হয়েছে দাবি করে ‍তিনি বলেন, হত্যায় যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের একজন সিয়াম এখন কাঠমান্ডুতে আছেন। আর মূল পরিকল্পনাকারী ও বেনিফিশিয়ারি আখতারুজ্জামান শাহীন এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তাদের পাসপোর্ট ফোন নম্বর সংগ্রহ করে আমাদের আইজিপি ইন্টারপোলকে অবহিত করেছেন। সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোল থেকে নেপাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরাও ঢাকায় নেপালের দূতাবাসের সঙ্গে আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ রাখছি।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। পরে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকার গুলশান-বসুন্ধরায় বসে দুই মাস আগে আনার হত্যার পরিকল্পনা হয় জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, তারা (হত্যাকারীরা) এর আগেও চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশে হত্যা করলে সমস্যা হবে ভেবে তারা বেছে নিয়েছে কলকাতাকে। লাশ যেন না পাওয়া যায়, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার (আনারের) মোবাইল কখনও বেনাপোল, কখনও দিল্লি, কখনও মোজাফফরাবাদে নিয়ে গেছে তারা। এভাবে তারা একদম ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে এই অপরাধটি করে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, মূল যে পরিকল্পনাকারী (শাহীন) সে আমাদের কাছে নেই। আরেক আসামি সিয়াম আছে কাঠমান্ডুতে। এই হত্যার পেছনে এলাকার আধিপত্য নিয়ে কোনো সমস্যা আছে কিনা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা আছে কিনা, তিনি (এমপি আনার) মাঝে মাঝেই কলকাতা যেতেন, তার সেখানে ব্যবসা ছিল কিনা, শিমুল ভুঁইয়া নতুন ব্যবসার মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেখানে নিয়ে গেলেন কিনা, আমরা কিন্তু সবকিছু বিশ্লেষণ করছি। হঠাৎ করে কোনো একটা মোটিভ স্পেসিফিকভাবে বলা এই মুহূর্তে ঠিক হবে না।

তদন্তের এক পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।

ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন, যেখানে আনারকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে।

সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরে তা ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়।

হারুন বলেন, এই মামলাটা কনক্লুসিভ (উপসংহারের) পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন আলামত নিয়ে আমাদের সমস্যা হওয়ার কথা না। আরও কিছু ডিজিটাল ও পারিপার্শ্বিক এভিডেন্স আমরা সংগ্রহ করেছি। দুই দেশের পুলিশের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন আমাদের মূল কাজটা হবে যে আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হননি তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনা।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন