শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

সিলেটে পানিবন্দি ৫ লাখের বেশি মানুষ

সিলেটে পানিবন্দি ৫ লাখের বেশি মানুষ

❏ সিটি করপোরেশনের সব ছুটি বাতিল

ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী সাতটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসকল উপজেলার বন্যার পানি সুরমা নদী হয়ে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। শুক্রবার সকাল থেকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এরফলে সাত উপজেলায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকেআকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিলেটে সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি সাহায্যের জন্য ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে নগর ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় সভায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান সভাপতিত্ব করেন।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হবে। তাছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টার একটি কন্ট্রোল রুম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর জামতলা, তালতলাস্থ সিলেটের ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় ও তোপখানা, যতরপুর, মাছিমপুর সোবহানীঘাটসহ বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সিলেট নগরীর যতরপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের এলাকায় গত ১২ ঘণ্টায় অনেক পানি বেড়েছে। আমার বাসার গেটের সামনে সকাল থেকে বন্যার পানি অবস্থান করছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে সন্ধ্যার আগে আমার বাসায় পানি চলে আসবে।

এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সভায় নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ওই ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপ-কেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় জনস্বার্থে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে তিন টন চিড়া, তিন টন মুড়ি, গুড়, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং ওরস্যালাইন ক্রয় করা হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি সভা আহ্বানের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ইতোমধ্যে জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম (০১৯৫৮-২৮৪৮০০) অথবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওরা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন