পালংশাক - দাম কম, রান্না সহজ, আর স্বাদেও অনন্য। কিন্তু এই সাধারণ শাকটিই পুষ্টিগুণের দিক থেকে বেশ শক্তিশালী। পালংশাক হলো এমন একটি খাবার যা শরীরের প্রায় সব অঙ্গকে কিছু না কিছু উপকার দেয়। হাড়, চোখ, রক্ত, ত্বক — সব কিছুর জন্যই পালংশাক একধরনের প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ।
জেনে নিন পালংশাকের উপকার
১. রক্তশূন্যতা কমাতে সহায়ক
পালংশাকে আছে আয়রন, ফলেট এবং ভিটামিন সি—রক্ত তৈরিতে প্রয়োজনীয় এই তিন উপাদানই রক্তশূন্যতা কমাতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে নারীদের জন্য পালংশাক নিয়মিত খাওয়াকে অনেক বিশেষজ্ঞ গুরুত্ব দেন। সেই সঙ্গে ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ বাড়ায়, ফলে পালংয়ের আয়রন আরও ভালোভাবে কাজে লাগে।
২. হাড় মজবুত করে
এই শাকে আছে ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড় মজবুত রাখতে অপরিহার্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি। নিয়মিত পালংশাক খেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কিছুটা কমে।
৩. চোখের যত্নে
পালংশাকে লুটিন ও জিয়াজ্যান্থিন থাকে, যা চোখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দুইটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো চোখকে নীল আলো, দূষণ এবং বয়সজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত পালংশাক খেলে ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশনসহ চোখের নানা সমস্যার ঝুঁকি কমে।
৪. হজমশক্তি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
পালংশাকে থাকা ফাইবার হজম ভালো করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য পালংশাক একটি দারুণ সাইড ডিশ। কম ক্যালোরি, কিন্তু ভরপুর পুষ্টি — এক কথায়, কম খরচে বেশি সুবিধা।
৫. হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো
পালংশাকে থাকা নাইট্রেট রক্তনালিকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ কমে এবং হৃদ্যন্ত্রের ওপর চাপ কম পড়ে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমায়, যা হৃদ্রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৬. লিভারের জন্য সহায়ক
পালংশাক শরীরের টক্সিন ভেঙে দিতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারকে পরিষ্কার রাখে এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। শীতকালে যখন ভারী খাবার বেশি খাওয়া হয়, তখন পালংশাক লিভারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৭. ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে কাজ করে
ভিটামিন এ, সি ও ই — এই তিনটি ভিটামিন ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে। পালংশাকে এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। ফলে ত্বক টানটান থাকে, দাগ কমে, রোদে পোড়া কম হয়। এতে থাকা আয়রন ও ফোলেট চুল পড়া কমাতেও সহায়তা করে।
পালংশাক সস্তা, সহজলভ্য এবং রান্না করা যায় নানাভাবে। স্যুপ, ভাজি, ডাল কিংবা স্মুদি — যেভাবেই খান, শরীর উপকার পাবে। নিয়মিত শীতকালীন খাবারের তালিকায় পালংশাক রাখলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, রক্ত ভালো থাকে, হাড় শক্ত হয় এবং হৃদ্যন্ত্রও নিরাপদ থাকে। তাই পালংশাককে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
সূত্র: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-ডেভিস
ডেস্ক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম























