রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছেলের মৃত্যু চেয়ে আদালতে বাবা!

ছেলের মৃত্যু চেয়ে আদালতে বাবা!

এক দুর্ঘটনার পর কলেজছাত্র হরিশ কোমায় রয়েছেন। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ছেলের চিকিৎসায় সব হারিয়েছে তার বৃদ্ধ বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত অসহায় বাবা ছেলের মৃত্যু চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্ট।

জানা গেছে, হরিশ মোহালির চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। ২০১৩ সালে কলেজের চার তলা থেকে পড়ে যান তিনি। প্রাণরক্ষা হলেও শরীরের প্রায় সমস্ত অঙ্গই অকেজো হয়ে যায়। মাথার আঘাত ছিল অত্যন্ত গুরুতর। দুর্ঘটনা নিয়ে ‘রহস্য’ রয়েছে বলেই পরিবারের দাবি। থানায় মামলাও করেন হরিশের বাবা রানা। ছেলের চিকিৎসার জন্য একের পর এক বড় হাসপাতাল ঘুরেছেন।

দীর্ঘ দিন চণ্ডীগড়ের পিজিআইতে হরিশের চিকিৎসা হয়েছে। তার পর এমস, রামমনোহর লোহিয়া, লোকনায়ক এবং দিল্লির ফর্টিস হাসপাতালে দেখানো হয়েছে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। ১১ বছরের বেশি সময় বিছানা থেকে ওঠেননি হরিশ।

প্রতি দিন ছেলেকে একটু একটু করে বিছানার সঙ্গে মিশে যেতে দেখে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন হরিশের ৬২ বছরের বাবা রানা এবং মা নির্মলা দেবী। তাদের আবেদন, মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে ছেলেকে প্যাসিভ ইউথানাসিয়া (নিষ্কৃতি-মৃত্যু) দেয়া হোক।

আদালতের কাছে রানা জানান, যখন বাবা-মা তাদের সন্তানের মৃত্যু কামনা করে, তখন তা নিষ্ঠুরতা নয়। সেটা আসলে ভালবাসার অভিশাপ। সেই ভালবাসার টানে ছেলের জীবন শেষ করে দেওয়ার অনুমতি চাইছেন আদালতের কাছে। সন্তানের শারীরিক কষ্টের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মানসিক এবং আর্থিক অবস্থার কথা হাই কোর্টে তুলে ধরেছেন রানা। 

তিনি বলেন, ছেলের ২৪ ঘণ্টা দেখাশোনার জন্য এক জন নার্স রাখতে হয়। মাসে তার পারিশ্রমিক ২৭ হাজার টাকা। আর আমাদের সবার মাসিক উপার্জন ২৮ হাজার টাকা। 

বেসরকারি চাকুরে রানা জানান, এখানেই শেষ নয়। ছেলের চিকিৎসার জন্য এক জন ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছেন। তাকেও ১৪-১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের পর বছর সন্তান এবং তাদের কষ্ট বেড়ে চলেছে, ব্যয়বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু, ছেলের ভাল হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না। চিকিৎসকেরাও কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি।

রানা বলেন, হরিশের চিকিৎসা, ওষুধপত্রের জন্য যে ব্যয়ভার, তা বহন করতে পারছি না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছিলের হরিশ। ওইটুকুই।

হাই কোর্টে হরিশের বাবা-মায়ের আর্তি, কী করে আমরা বেঁচে আছি, তা কেবল আমরাই জানি। অন্যের প্রাণরক্ষা করতে নিজেদের অঙ্গ দান করব আমরা। অন্তত এটুকু সান্ত্বনা থাকবে যে, সেই মানুষটি ভালোভাবে বেঁচে রয়েছে।

২০২১ সালে রানা তাদের তিন তলা বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই কথাও আদালতে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ওই জায়গাটিকে বাড়ি বলে জানতাম ১৯৮৮ সাল থেকে। চার দেওয়ালের মধ্যে আমাদের— স্বামী-স্ত্রী-ছেলের অসংখ্য স্মৃতি ছড়িয়ে ছিল। আমাদের ওই জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছতে পারত না। ছেলের চিকিৎসার সুবিধার্থে এবং নিজেদের মানসিক শান্তির খোঁজে সেটুকুও বিক্রি করে দিয়েছি।

এখন মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা পেনশন পান রানা। ওই টাকায় সংসার চালাবেন কীভাবে আর ছেলের চিকিৎসা করাবেন কী দিয়ে! তাই এখন স্যান্ডউইচ তৈরি করে পাড়ায় বিক্রি করেন রানা ও তার স্ত্রী। ছোট ছেলে আশিস সদ্য একটি চাকরি পেয়েছেন। তাতে কোনও রকম ভাবে চলছে।

গত ৮ জুলাই আদালত রানার আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ভারতে আইন ইচ্ছাকৃতমৃত্যুর অনুমতি নেই।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন