রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেনীর বন্যাদুর্গতদের লড়াই এখন ঘর ফেরার

ফেনীর বন্যাদুর্গতদের লড়াই এখন ঘর ফেরার

ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে নতুন সংকটে পড়েছেন দুর্গতরা। কর্দমাক্ত ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যসামগ্রী ও আসবাবপত্র নিয়ে শুরু হয়েছে তাদের বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রাম।

৮ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে ওঠে। এতে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি এবং ৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যায় ফুলগাজীর শ্রীপুর সড়কের অন্তত ১৫টি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ব্যবসায়ী মো. আবদুল গফুর বলেন, “এত বছর দোকান চালিয়ে সংসার চলত, একদিনেই নদীতে হারিয়ে গেল সব।”

পানি নেমে গেলেও অনেক এলাকা এখনও বসবাসযোগ্য নয়। গজারিয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিদা আক্তার জানান, “কাদা আর পঁচা গন্ধে ঘরে থাকা যাচ্ছে না, শিশুদেরও অসুস্থ লাগছে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদীবাঁধে ১৪টি ভাঙনের ফলে অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, “জিওব্যাগ দিয়ে জরুরি মেরামতের চেষ্টা চলছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বাঁধ ও নদী খনন অপরিহার্য।”

স্থানীয়রা বলছেন, বারবার প্লাবন ঠেকাতে চাই স্থায়ী ব্যবস্থা। ফুলগাজীর সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল রসুল গোলাপ বলেন, “ত্রাণ নয়, মানুষ চায় টেকসই বেড়িবাঁধ।”

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, “মানুষ এখন শুধু ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধও চাইছে—দুটোই দরকার।”

অন্যদিকে, বিদ্যুৎ এখনও পুরোপুরি ফিরেনি অনেক এলাকায়। ইউএনও ফারিয়া ইসলাম জানান, “বিদ্যুৎ সংযোগ ও স্বাস্থ্য সহায়তা পুনঃস্থাপনে আমরা একযোগে কাজ করছি।”

পরশুরামের ইউএনও আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে, তবে চাহিদা অনুযায়ী সবকিছুই দেওয়া যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ