জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা দ্রুতই যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। জবাবে পাল্টা হামলা চালানো শুরু করেছে পাকিস্তানও।
এ অবস্থায় ভোররাতেই পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী মারিয়াম নেওয়াজ শরীফ । একইসঙ্গে প্রদেশটির সব ডাক্তার এবং চিকিৎসা কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও, বেসামরিক প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিভাগের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের জন্য জরুরি তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রদেশটির সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু পাঞ্জাবই নয়, আসন্ন আরও বড় হামলার আশঙ্কায় রাজধানী ইসলামাবাদেও সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার।
পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মারিয়াম নেওয়াজ শরীফ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা তার এক বিবৃতিতে লিখেছেন, জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আগামীকাল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আন্তর্জাতিক পরীক্ষা সংস্থাগুলোর পরিচালিত পরীক্ষাগুলো বাদে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে।
চলমান পরিস্থিতিতে কেউ যেন অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের না হন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলেন, সেজন্য পাঞ্জাবের বাসিন্দাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি হাসপাতাল, উদ্ধারকর্মী এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জরুরিভিত্তিতে সতর্ক থাকার নির্দেশও দিয়েছেন। বিবৃতিতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এও বলেছেন, আমরা শান্তি চাই, তবে সম্মানের সাথে। যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সমগ্র জাতি সেনাবাহিনীতে পরিণত হবে।
এদিকে পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরপরই ৪৮ ঘণ্টার জন্য দেশটির আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানগামী তাদের সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কাতার এয়ারওয়েজ।
বিজ্ঞাপন
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে কাতার এয়ারওয়েজ পাকিস্তানে ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ ফ্লাইট-সংক্রান্ত তথ্য জানতে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট qatarairways.com ভিজিট করার আহ্বান জানিয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ।
অন্যদিকে ভারতেও নয়টি শহর থেকে সব ধরনের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এছাড়া ভারতের বৃহত্তম বাজেট এয়ারলাইন ইন্ডিগো যাত্রীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, কাশ্মীর ও উত্তর ভারতের একাধিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাদের মতে, আকাশসীমার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আরেক এয়ারলাইনস স্পাইসজেটও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর ভারতের কিছু অংশে বিমানবন্দরগুলো বন্ধ রয়েছে চলমান পরিস্থিতির কারণে।
মঙ্গলবার (৬ মে) মধ্যরাতে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরসহ দেশটির কয়েকটি স্থানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের অভিযানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। তাদের দাবি, পাকিস্তানের মোট নয়টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় পাকিস্তানে মোট ৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩৫ জন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন। বুধবার (৭ মে) সকালে এক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত ৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
একইদিন সকালে আরেক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এর আগে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলার পর ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে নিশানা বানানো হয়নি এ অভিযানে।