জাতীয় রাজস্ব বোর্ড— এনবিআরকে দুই ভাগ করে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, তা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কলম বিরতির ডাক দিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মঙ্গলবার পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন শুল্ক ও আয়কর কর্মকর্তারা। তারা বলেন, দেশের সব কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনসহ এনবিআরের সব দপ্তরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম ও বাজেট প্রণয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রমকে কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে। ঐক্য পরিষদের তরফে কর্মসূচি ঘোষণা করেন অতিরিক্ত কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) সাধন কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং বৃহস্পতি ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ বিরতি চলবে।
এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে তা দ্রুত জারি হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারদের কর্মীরা এটি বাতিলের দাবি তোলে।
এর মধ্যে সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের পদসমূহ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে “কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন” যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদসমূহে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ। অধ্যাদেশে নীতির সচিব হিসেবে 'উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে' নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলুপ্তির ফলে এর বর্তমান সাংগঠনিক জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত হবে। আর দুই বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো কেমন হবে, তার সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ১৯৯৩ সালে এনবিআরের নীতি ও প্রশাসন দুটোকে আলাদা করার জন্য বলেছিল। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশ্ব ব্যাংকও চাপ দিয়েছিল। কিন্তু তখন তা বেশি দূর এগোয়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসায়ী মহল, সামষ্ঠিক অর্থনীতির বিশ্লেষক ও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা এনবিআরের বর্তমান মডেল থেকে সরে আসার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এ ক্ষেত্রে মোটা দাগে তাদের পরামর্শ ছিল, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা। এর মধ্যে গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা এনবিআরের সাবেক দুই চেয়ারম্যান, রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও আদায়ের শুল্ক ও আয়কর ক্যাডারের দুইজন সাবেক সদস্য, যারা সংশ্লিষ্ট ক্যাডার থেকে এসেছেন, তাদের এ কমিটিতে রাখা হয়। ডিসেম্বরে এ কমিটি অর্থ উপদেষ্টার কাছে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে আলাদা বিভাগ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রতিবেদন জমা দেয়।