বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

আদালতে মমতাজ: হট্টগোল, লিফটে নিতে আইনজীবীদের ‘বাধা’

আদালতে মমতাজ: হট্টগোল, লিফটে নিতে আইনজীবীদের ‘বাধা’

সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানি ঘিরে আদালতে হট্টগোল হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ ঘটনা ঘটে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার এক হত্যা মামলায় সোমবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

পরের দিন দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয় এ সংগীত শিল্পীকে। এরপর বিকাল বেলা ৩টা ৪ মিনিটের দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে তোলা হয় এজলাসে।ওই সময় আদালতে অন্য মামলার শুনানি চলছিল। এর মধ্যে মমতাজকে নেওয়া হলে পুরো এজলাস কক্ষ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর সেখানে হট্টগোল হয়। সেখানে আইনজীবীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, “শুনানির সময় কেউ কোনো ধরনের সাউন্ড করবেন না। সাংবাদিকরা আসামির সঙ্গে কথা বলবেন না, ছবি তুলবেন না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বক্তব্য রাখবেন। তবে উচ্ছৃঙ্খল বক্তব্য রাখবেন না। এমনভাবে বক্তব্য রাখবেন যেন কারো মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি না হয়।”

এরপর বেলা ৩ টা ৭ মিনিটে শুনানি শুরু হলে মমতাজের হেলমেট খোলা হয়। এসময় আইনজীবীরা তার মুখ থেকে মাস্ক খোলার দাবি তোলেন। দাবি মেনে মাস্ক খোলেন মমতাজ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মনিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, 'আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকারা অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি। তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন।'


রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি, গুম, আয়নাঘর, পাউডার দিয়ে যখন লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হয় তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল। সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিল।”


তিনি বলেন, “মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মানুষ নম্র, ভদ্র। তাদের ভোট হরণ করল। সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে সে গান গাইলো- আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা। আর সংসদে সে তো কথা বলতে তো পারবে না, কারণ তার তো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা নাই।” ওমর ফারুক বলেন, “সংসদে তোফায়েল-আমুসহ অন্য জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগের নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াদের সমালোচনা করে কটূ কথা বলে নাই; সেখানে সে বক্তব্য রাখল খালেদার বাপের নাম কী?”


ওমর ফারুকের কথা বলা শেষ হলে আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান আদালত। তবে আইনজীবীকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় আদালতের। আসামি পক্ষে দাখিল করা নথি থেকে আইনজীবী রেজাউল করিমকে ডাকতে থাকেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা। এরপর মমতাজকে বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি উনাকে চেনেন। আইনজীবী হিসেবে তাকে যদি নিয়োগ করতে চান, তাহলে ওকালতনামায় সই করেন।” পরে মমতাজ তার আইনজীবীকে শনাক্ত করার পর ওকালতনামায় সই করেন। তবে ওই আইনজীবী আদালতকে বলেন, “আজ আমার কোনো বক্তব্য নেই।” এরপর আদালত মমতাজ বেগমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


শুনানির সময় জনাকীর্ণ এজলাসের কাঠগড়ায় গালে হাত দিয়ে বিষণ্নচিত্তে পিপির বক্তব্য শুনতে দেখা যায় মমতাজকে। রিমান্ডের আদেশ শুনে আইনজীবীরা বলেন, চার দিন না, সাত দিনেরই রিমান্ড দিতে হবে। এরপর প্রস্তুতি নেওয়া হয় মমতাজকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ায়। তখন আইনজীবীরা বলেন, তাকে লিফটে নেওয়া যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে নামাতে হবে। কেউ কেউ বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকে লিফটে নিতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে হেঁটে তোলা হয়েছে। তাকে সাত তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। এ দাবি নিয়ে এজলাসের গেটের সামনে অবস্থান নেন আইনজীবীরা। ওই সময় পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার ইন্সপেক্টর মো. জাহিদুল ইসলাম আদালতকে বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনায় আসামিকে কাঠগড়ায় কিছুক্ষণ রাখা হোক।”


তখন বিচারক বলেন, “আপনি পারলে লিফটে নামিয়ে নিয়ে যান।” তখন জাহিদুল ইসলাম বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এখানে নাই। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে তাকে কিছুক্ষণ রাখতে হবে।” তখনো এজলাসে কয়েকজন আইনজীবী চিৎকার করে বলতে থাকেন, মমতাজ বিচারককে গান শোনাবেন। তখন আদালত আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী আইনজীবীদের আদালত ত্যাগ করতে বলেন। আইনজীবীরা এজলাস ত্যাগ করে গেটের সামনে অবস্থান করেন। প্রায় ২১ মিনিট এজলাসে রাখা হয় মমতাজকে। পরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে তাকে লিফটে তুলে নিচে নামানো হয়। নিচে এসেও অবস্থান নেন আইনজীবীরা। পরে নিচ থেকে মমতাজকে হাজতখানায় নেওয়া হয়।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ