বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

‘জীবন’ হাতে নিয়ে পার হতে হয় যে সেতু

‘জীবন’ হাতে নিয়ে পার হতে হয় যে সেতু

এখন থেকে ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় কুমিল্লার দৌলতপুরের মুকুন্দি গ্রামে একটি সেতু। ২০১৫ সালে সেতুর দুটি অংশ ধসে পড়ে। এরপর রেলিং ভেঙে যায়, পিলারে ফাটল ধরে, আর পাটাতনের বড় অংশ খসে পড়ে। সেতুর এমন জরাজীর্ণ ও ভগ্নদশার কারণে ‘জীবন’ হাতে নিয়ে ছয় গ্রামের মানুষ নিত্য যাতায়াত করছে। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ এক দশকেও জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ কেউই কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংস্কারের। ফলে সেতুটি এখন কার্যত চলাচলের অযোগ্য। তবে বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। 

এই সেতু দিয়েই প্রতিদিন দৌলতপুর ইউনিয়নের মুকুন্দি, কাউয়াদি, ভবানীপুর, তুলাতলী, সাধারদিয়া ও নতুনবাজার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। আশপাশে রয়েছে একাধিক স্কুল ও মাদ্রাসা। প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই সেতু পার হয়ে স্কুলে যায়। অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন—কখন যেন একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন ও জীবিকা এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল। কৃষকেরা ফসল নিয়ে বাজারে যেতে বাধ্য হন এই ভাঙা সেতু পার হয়ে। সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল একরকম বন্ধই হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় এলাকা থেকে বাজার কিংবা জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ব্রিজটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ তা বাস্তবায়ন করেননি। এর মধ্যে একবার গ্রামের মানুষ নিজেরাই মসজিদের দানের টাকায় অস্থায়ীভাবে কিছুটা সংস্কার করেছিলেন, কিন্তু সেটা কোনো স্থায়ী সমাধান ছিল না।

শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ জানানো হয়েছে। অনেক দিন ধরে এই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত এই সেতু সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সেতুর এমন করুণ চিত্র নিয়ে দৌলতপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের ভাষায়, এটি শুধু একটি সেতু নয়, এই অঞ্চলের জীবনযাত্রার একমাত্র মাধ্যম। প্রতিদিন স্কুলপড়ুয়া শিশু, বৃদ্ধ মানুষ, রোগী, কৃষক ও গৃহবধূরা ভাঙা কাঠামোর ওপর পা রেখে জীবন বাজি রেখে চলাচল করছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দাউদকান্দি উপজেলার প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ব্রিজটি সম্পর্কে সম্প্রতি তিনি অবগত হয়েছেন। 

সেতুটি চলাচলের জন্য অনুপযোগী স্বীকার করে তিনি জানান, দ্রুতই পুনর্নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ