শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত: মাইন বিস্ফোরণে ৪ জনের পা বিচ্ছিন্ন

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত: মাইন বিস্ফোরণে ৪ জনের পা বিচ্ছিন্ন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক সপ্তাহে পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে ৪ জনের। গত বৃহস্পতিবার রাতে মো. ইউনুছ (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মাইন বিস্ফোরণে ডান পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মিয়ানমারের লাল কাইন্দা এলাকায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহত ইউনুছ কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং এজাহার হোসেনের ছেলে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরিত হলে ইউনুছ গুরুতর আহত হন। এ সময় সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকা থেকে তার চিৎকার শুনে দুইজন বাংলাদেশি যুবক ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে তাকে উখিয়ার কুতুপালং এম এস এফ হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

স্থানীয়দের ধারণা, আরাকান আর্মি নির্ধারিত রুট এড়িয়ে বিকল্প রুটে যাতায়াত করতে গিয়ে মাইনের কবলে পড়ছেন চোরাকারবারিরা। গেল এক সপ্তাহে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৪ জনের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বারবার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে আতঙ্ক।

 এদিকে গেল বুধবার মাইন বিস্ফোরণে ওমর মিয়া নামে এক বাংলাদেশী যুবকের বাম পায়ের গোড়ালির নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন যায়। সীমান্তের জারুলিয়া ছড়ি বিওপির ৪৬, ৪৭ পিলারের ৪০০ মিটার দূরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এঘটনা ঘটে। আহত ওমর মিয়া কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের মৌলভীকাটা এলাকার বাসিন্দা সাবের মিয়ার ছেলে। গেল সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের চাকমার কাটা নামক সীমান্ত এলাকায় ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে ওপার থেকে বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা জন্য আসার পথে মাইন বিস্ফোরণে মিয়ানমারের রাখাইন যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা। আহত রাখাইন এলাকার ওই ব্যক্তির নাম ওলিমং তংচঙ্গ্যা। তিনি মেদাই গ্রামের চাবংর ছেলে।


স্থানীয়রা জানায়, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে মিয়ানমারের রাখাইন এই যুবক সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে থেকে বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য অনুপ্রবেশ করার সময়ে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়।

 

অপরদিকে গেল রোববার একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের জামছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আরাফাতুল ইসলাম প্রকাশ বাদল নামে এক বাংলাদেশি তরুণের বাম পায়ের নিচের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আরাফাতুল ইসলাম সদর ইউনিয়নের জামছড়ি গ্রামের খুইল্লা মিয়ার ছেলে। স্থানীয়রা জানান, জামছড়ি সাপমারা ঝিরি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাই পণ্য আনতে গিয়েছিল চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা।

এ সময় সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমারের আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরিত হয়ে বাংলাদেশি তরুণের বাম পায়ের নিচের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে স্থানীয়রা সীমান্তে গেলে আহত আরাফাতকে দেখতে পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তারা। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

বিজিবি সূত্র জানায়, আরাকান আর্মি কর্তৃক পুঁতে রাখা একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার চলমান সংঘর্ষের কারণে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় মাইন পুতে রেখেছে আরাকান আর্মি। তবে সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান রোধ করতে সীমান্তবর্তী এলাকায় কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। যেন অপরাধমূলক কাজ না বাড়ে এ জন্য টহল বাড়ানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গেল ২৬ জুন তুমর্রু সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ নিয়ে গেল এক বছরে স্থল মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের অধিক মানুষের পা বিচ্ছিন্নসহ গুরুত্বর আহত হয়েছে।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ