শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

‘ওদের গুলি করো’, শেখ হাসিনার নির্দেশ নিয়ে আল জাজিরার অনুসন্ধান

‘ওদের গুলি করো’, শেখ হাসিনার নির্দেশ নিয়ে আল জাজিরার অনুসন্ধান

গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন— সম্প্রতি বিবিসির যাচাই করা একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং ফাঁস হওয়ার পর একই ধরণের বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর তার সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের ওপর 'মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার' এবং 'যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই গুলি করার' 'একটি খোলা আদেশ' জারি করেছিলেন। আল জাজিরা হাসিনার গোপন ফোনকল রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে।

দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অনুসারে, কয়েক সপ্তাহ ধরে রক্তাক্ত বিক্ষোভ এবং সরকারি বাহিনীর নৃশংস অভিযানে প্রায় ১৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজারেরও বেশি আহত হওয়ার পর ৫ আগস্ট হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে পালিয়ে যান।

আল জাজিরা ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) রেকর্ডিংগুলোতে এআই কারসাজি হয়েছে কিনা তা ফরেনসিকভাবে বিশ্লেষণ করে এবং ভয়েস ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে কলকারীদের সনাক্ত করে।

১৮ জুলাই একটি কলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার নির্দেশ ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত নির্দেশ জারি করেছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে সেখানেই গুলি করবে। এটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত তাদের থামিয়েছি... আমি ছাত্রদের নিরাপত্তার কথা ভাবছিলাম।’

একটি ফোনালাপে শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়েও আলোচনা করেন হাসিনা। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যেখানেই তারা কোনো সমাবেশ দেখতে পায়, তা উপর থেকে - এখন এটি উপর থেকে করা হচ্ছে - এটি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয়েছে।’

ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাবির শরীফ বলেন, আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে একটি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়েছিল। তিনি আরও জানান, ‘গুলি কাঁধে অথবা বুকে প্রবেশ করেছিল এবং সবগুলোই শরীরের ভেতরে রয়ে গিয়েছিল। এক্স-রেতে বিশাল গুলি দেখা গেছে।’

এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। হাসিনা, তার মন্ত্রী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

হাসিনার নজরদারি নেটওয়ার্ক ‘এনটিএমসি’ কথোপকথনগুলো রেকর্ড করে, যাদের বিরুদ্ধে আগেও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি অন্যদের জন্য অনেক গভীর খাদ খনন করেছেন। এখন তিনি খাদে পড়ে গেছেন।’

২০২৪ সালের জুন মাসে হাইকোর্টের কোটা বহাল রাখার রায়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। তার মৃত্যুই আন্দোলনে মোড় নেয়।

সালমান এফ রহমান ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কথোপকথনে উঠে আসে, ময়নাতদন্তে ‘গুলি’র কথা বাদ দিতে চাওয়া হয়েছিল। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম জানান, ‘তারা একটি প্রতিবেদন লিখতে চেয়েছিল যে, আবু সাঈদ ভাই পাথর ছোঁড়ার আঘাতের কারণে মারা গেছেন... (যদিও) তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন।’

হাসিনার বাসভবনে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকে সাঈদের বোন সুমি খাতুন বলেন, ‘ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে, পুলিশ তাকে গুলি করেছে। এখানে তদন্ত করার কী আছে? এখানে আসাটা ভুল ছিল।’

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে বলেন, হাসিনা কখনো 'মারাত্মক অস্ত্র' শব্দ ব্যবহার করেননি এবং রেকর্ডিংগুলো ‘সাজানো বা জাল’ হতে পারে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ