সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলের হামলা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ১১৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য দ্রুত ইসিকে জানাতে বললেন সালাহউদ্দিন বাংলাবাজার পত্রিকা.কম নিজ দলের নারী কর্মীকে কুপ্রস্তাব এনসিপি নেতার, অডিও ফাঁস! বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ধেয়ে আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘রিমঝিম’, তিন বিভাগে বন্যার শঙ্কা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম হাসিনা-কামালকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে এখনও গণমাধ্যম পুরোপুরি মুক্ত নয়’ বাংলাবাজার পত্রিকা.কম লন্ডন থেকে দেশে ফিরে যে বার্তা দিলেন আমীর খসরু বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ইডেন কলেজের পুকুরে পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাংলাবাজার পত্রিকা.কম ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে নিহত ৩৯০

সীমান্ত এলাকা থেকে পালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

সীমান্ত এলাকা থেকে পালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

❏ মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ ❏ মিয়ানমারের আরও ক্যাম্প বিদ্রোহীদের দখলে

❏ এপারে এসেছে ২৬৪ সীমান্তরক্ষী, ৬৫ রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক

মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই বিরতিহীনভাবে চলছে। এ কারণে টানা গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল নিক্ষেপসহ বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় এমন শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। বাদ যাচ্ছে না বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যও। আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে। এদিকে গত তিন দিনে অন্তত ৬০ সেনা সদস্যকে হারানোর পাশাপাশি খুইয়েছে বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটি। মূলত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স ও শসস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশজুড়ে এসব হামলা চালাচ্ছে। সাগাইং, ম্যাগওয়ে ও মান্দালয় অঞ্চলের পাশাপাশি কাচিন এবং কারেন রাজ্যেও লড়াই চলছে। কারেন রাজ্য থেকে জান্তা বাহিনীকে উৎখাত করার অঙ্গীকার করেছে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন।

অন্যদিকে চলমান সংঘর্ষে জীবন বাঁচাতে এখন পর্যন্ত ২৬৪ জন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য, সেনা সদস্য, পুলিশ সদস্য, ইমিগ্রেশন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। দেশটিতে সংঘাত চলাকালে মঙ্গলবার নতুন করে ৬৫ জন রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের প্রতিহত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৬৪ জনের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে নতুন করে ৩৫ জন যুক্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। বান্দরবানে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য বলছে- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন ও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারে চলা সংঘাত-সংঘর্ষের শব্দ ভেসে আসছে। এসব এলাকায় এক লাখের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে।

সীমান্তের দুটি বসতঘরে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মর্টার শেল এবং আরও পাঁচটি ঘরে গুলি এসে আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ৫ বাংলাদেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো. শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য তিন দিন আগে থেকে বলা হচ্ছে। আজ আবারও ওই সব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে তাদের সরিয়ে আনা হবে।

ঘুমধুম ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজারসংলগ্ন ছৈয়দ নুরের বসতঘরে একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে ঘরটির জানালা ভেঙে গেছে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। একই সময়ে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে আরও একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এ সময় লাগাতার গুলি এসে পড়েছে এপারে। ঘুমধুম সীমান্তের নজরুল ইসলামের বাড়ি, রহমতবিল-সংলগ্ন আবদুল মান্নানের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়িতে গুলির আঘাত লেগেছে।

এর আগে সোমবার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হন এক বাংলাদেশিসহ দুজন। এর পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এলাকার লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সোমবার রাত থেকে দুই পক্ষের লড়াইয়ের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে। এত কম্পন আমরা আর দেখিনি। একেকটি গোলা নিক্ষেপের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছেন লোকজন।’ তিনি জানান, ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া, জলপাইতলী, মণ্ডলপাড়া, নয়াপাড়া, কোনারপাড়া, পশ্চিম কুল, বেতবুনিয়া বাজারপাড়া, পাশের পালংখালী ইউনিয়নের উখিয়ার ঘাট, পূর্ব ফাঁড়ির বিল, নলবনিয়া, আঞ্জুমানপাড়া, বালুখালী ও দক্ষিণ বালুখালী এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছে। কোনোভাবেই বিস্ফোরণ বন্ধ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসছেন অনেকেই। তাদের স্থানীয় লোকজন আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করছেন। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

ঘুমধুম ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাইশ পারি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ২০টি পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ৩০টি পরিবার, তুমব্রু কোনারপাড়া থেকে ৩০টি পরিবার, ঘুমধুম পূর্ব পাড়া থেকে ২০টি পরিবার, তুমব্রু হিন্দুপাড়া থেকে ১০টি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।’

ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা কয়েক দিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য ছাড়াও পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকেরা।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ