পুরো বিশ্বের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। কমলা হ্যারিস অথবা ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনিই ক্ষমতায় বসুন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে সেটা নিয়েই বেশি চিন্তিত বিশ্বনেতারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বনেতাদের পছন্দের প্রার্থী কে, তা নিয়ে রয়েছে সর্বমহলে অনেক আলোচনা।
প্রথমেই আসবে আলোচিত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম। হোয়াইট হাউসে তিনি কাকে দেখতে চান তা নিয়ে রয়েছে রহস্য। তবে কিছুদিন আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট মজা করে কমলাকে পছন্দের কথা বললেও তার পছন্দের প্রেসিডেন্ট যে ট্রাম্প, তার অনেক ইঙ্গিত কিছুটা প্রকাশ্যেই রয়েছে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ বলেন, ‘পুতিন নানা কারণে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করতে পারেন। প্রথমত, পুতিন মনে করেন ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি নমনীয় এবং ইউক্রেনের সঙ্গে একটি ভালো চুক্তিতে সহায়তা করবেন। এ ছাড়া ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধ ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন। আমি মনে করি, ট্রাম্পের মধ্যে নিজের কর্তৃত্ববাদী হিসেবে নিজের ছবি দেখেন পুতিন। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পকে তিনি বুঝতে পারেন।’
তবে বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেই জিতে আসুক, মস্কো মনে করে, রাশিয়ার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই থাকবে।
এ দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সরাসরি কমলা অথবা ট্রাম্প কাউকেই সমর্থন দিতে রাজি নন। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
তথ্যসূত্র বলছে, ট্রাম্পের সময় চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তাই আবার ট্রাম্প জিতলে সে পরিস্থিতি তৈরি হবে। ডেমোক্র্যাটরাও এখন বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব কমাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে বাণিজ্যযুদ্ধ থাকলেও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চান ট্রাম্প।
গেল ১৪ জুলাই ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর বিশ্বনেতাদের অনেকেই তাকে বার্তা দিয়েছিলেন। ওই সময় সি চিন পিংয়ের বার্তাও পেয়েছিলেন তিনি। সির বার্তা ট্রাম্প পেলেও চীনের কর্মকর্তারা আবার কমলাঘেঁষা বেশি।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল কাউকেই সরাসরি সমর্থন দেননি। তবে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে দুদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্পের সময় কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় খরচ না বাড়ানোর অভিযোগ ছিল।
জাপানের পক্ষে ট্রাম্প জয়ী হলে তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কমবে। ট্রাম্প শুল্ক বাড়াবেন এবং জাপানকে সামরিক বাজেট বাড়াতে বলবেন। কমলা প্রেসিডেন্ট হলে তাদের নীতি ধারাবাহিকভাবে চালু থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ট্রাম্প জয়ী হলে নানা প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাই ট্রাম্পের পক্ষে তাদের না যাওয়াই স্বাভাবিক।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কাউকে সরাসরি সমর্থন না করলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্পের দিকেই হেলে রয়েছেন তিনি।
ইউরোপের নেতাদের মধ্যে অনেকেই এবার কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন। কারণ, ট্রাম্প পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ কমলাকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘আমি তাকে ভালোভাবে চিনি। তিনি দারুণ প্রেসিডেন্ট হবেন।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ। কিছুদিন আগেও ট্রাম্প মোদিকে প্রশংসা করে টুইট করেছেন।
তবে চ্যাথাম হাউসের দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো চৈতজ্ঞ বাজপেয়ী বলেন, ‘আমি মনে করি না, মোদির কোনো পছন্দের প্রার্থী আছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে দুদলেরই মত রয়েছে।’ সূত্র: আলজাজিরা।