আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে তাদেরকে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়।
দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করেন।
এদিকে সম্মেলনে চলতি মেয়াদের কমিটির শেষ বক্তব্যে দল থেকে বিদায় চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেখানেই থাকি না কেন আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। নতুন আসতে হবে। পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন, এটাই চিরাচরিত নিয়ম। তবে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের সময় উপস্থিত কাউন্সিলররা ‘না, না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, এই কমিটি ২০১৯ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা যথাসম্ভব পালনের চেষ্টা করেছি। এরপর অনেক ঝামেলা, অনেক কিছু গেছে। করোনা মোকাবিলা, যুদ্ধ সব কিছুর মধ্যে দিয়েও আমরা সময়মতো কাউন্সিল করতে পেরেছি। যেসব জেলা ও ইউনিটে এখনও সম্মেলন হয়নি, নতুন যে কমিটি আসবে সেই কমিটির নেতৃত্বে এসব জায়গায় অবশ্যই যেন সম্মেলন হয়। সেদিকে নজর দিতে হবে।
উপস্থিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যেখানেই থাকি না কেন আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন এটাই চিরাচরিত নিয়ম। এই কথা বলে আমি আপনাদের থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালের সম্মেলনে যে কার্যকরী সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল সেটা বিলুপ্ত ঘোষণা করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি। এ সময় ‘না, না’ বলে চিৎকার করেন কাউন্সিলররা। তাদের থামাতে না পেরে শেখ হাসিনা বলে উঠেন, ‘এরকম করলে হবে না তো’। পরে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব হবে। সমর্থন হবে। তখন আপনারাই বিবেচনা করবেন। আপনাদের ওপর সব ভার ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিচ্ছি।
আমির হোসেন আমু সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন এবং দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার তা সমর্থন করেন। নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এ পদে আর কোনো নাম প্রস্তাব না পাওয়ায় শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন।
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করলে তাতে সমর্থন জানান ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জমান তরুণ। নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এ পদে আর কোনো নাম প্রস্তাব না পাওয়ায় ওবায়দুল কাদেরকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন।
পরে ২২তম জাতীয় সম্মেলনে নব নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জমান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, কামরুল ইসলাম, সিমিম হোসেন রিমি ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা হলেন- ড. হাছান মাহমুদ, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সাংগঠনিক সম্পাদকরা হলেন- আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সুজিত রায় নন্দী।
এছাড়া কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুন অর রশীদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগমের নাম ঘোষণা করেন। এছাড়া উপ-দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন সায়েম খান।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে সারাদেশ থেকে আসা প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর অংশ নেন। দলটির ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সর্বময় ক্ষমতা দলীয় প্রধানের হাতে অর্পণ করা হয়। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা সম্মেলন স্থলে প্রবেশের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। একই সময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত।