উচ্ছ্বাস আর প্রত্যয়ী ঘোষণার মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের স্বপ্নযাত্রা পর্বে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ; যানজটের নগরীতে ঠিক সময়ে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর আশা দেখাচ্ছে আধুনিক এই গণপরিবহন। বুধবার বর্ণিল আয়োজনে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; পরে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন চালু করে দিয়ে টিকেট কেটে প্রথম যাত্রী হয়ে তিনি গন্তব্যেও গিয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী মেট্রোরেল যাত্রা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার বোন এবং জাতির জনকের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। তিনিও টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ওঠেন। বিরতিহীন যাত্রা করে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের মধ্যে আগারগাঁও স্টেশনে এসে থামে ট্রেন। উত্তরা উত্তর স্টেশনে দুটি ট্রেন ছিল। এরমধ্যে প্রথম ট্রেনটি বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরেরটায় যাত্রী হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে আরও ছিলেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা শিক্ষক, ইমাম, অন্যান্য ধর্মযাজক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, দোকানি/বাদাম বিক্রেতা/সবজি বিক্রেতা, মেট্রোরেলের শ্রমিক, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী, একজন দৃষ্টি/বুদ্ধি প্রতিবন্ধী— সব মিলিয়ে দুই শতাধিক মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মেট্রোরেল ভ্রমণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার মানুষরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রীদের তালিকায় রয়েছেন।
এর আগে বেলা ১১টা ০৫ মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত ও দেশের প্রথম মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক, আজ বাংলাদেশ তথা ঢাকায় আমরা দিতে পারলাম, সংযোজিত করতে পারলাম। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।
জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। নির্মাণকাজ চলার মধ্যে প্রথম দফায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে বৈদ্যুতিক ট্রেনে চলাচল করতে পারবে সাধারণ যাত্রীরাও।
উদ্বোধন ঘিরে এদিন উৎসবমুখর পরিবেশে সাজানো হয় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। উত্তরা-১৫ সেক্টরের দিয়াবাড়ি মাঠে সুধী সমাবেশে মিলিত হন বিপুলসংখ্যক মানুষ। সুধী সমাবেশের মঞ্চে শেখ রেহানা ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম রওশন আরা মান্নান, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবীব আহসান, সচিব এবিএম আমিনুল্লা নূরী, ডিএমসিটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক, ঢাকায় জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা ও জাইকার মুখ্য প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে এবং মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর স্বাগত বক্তব্যের পর ডিএমসিটিএলের এমডি এমএএন ছিদ্দিক, জাইকা প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে ও জাপানি রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা বক্তব্য দেন। মেট্রোরেলের এরিয়াল ভিডিও দেখানোর পর বাজানো হয় থিম সং। ‘অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট’-শিরোনামে এ গানে কণ্ঠ দেন সংগীত শিল্পী সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতির বক্তব্য দেয়ার পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা পর্বের পর মেট্রোরেলের শুভেচ্ছা স্মারক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন ওবায়দুল কাদের। এরপর মেট্রোরেলের কাজে জড়িতদের সঙ্গে দলীয় ছবি তুলেন সরকারপ্রধান। উন্মোচন করেন স্মারক ডাকটিকেট ও স্মারক নোট প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এই মেগা প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল লাইন (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণকাজ ২৬ জুন ২০১৬ সালে শুরু হয়। বুধবার এ লাইনের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন হলো।