কর্মব্যস্ত জীবনের আমাদের সারাদিন থাকতে হয় কাজের ওপর। কর্পোরেট অফিস থেকে শুরু করে ব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তাদের একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। ফলে দেখা দেয় ঘাড়, পিঠ, কোমর ব্যথার মতো সমস্যা। দীর্ঘদিন এমন সমস্যা চলতে থাকলে নষ্ট হয় অস্থিসন্ধি কিংবা পেশির নমনীয়তা। কখনো কখনো এই ব্যথা কোমর, পিঠ হয়ে পৌঁছায় ঘাড় পর্যন্ত।
অনেকেই এসব ব্যথা কমাতে গরম সেঁক, মলম কিংবা ওষুধের ওপর ভরসা রাখেন। তবে এসব সাময়িক কাজ করে। কোমর কিংবা পিঠ ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ভরসা রাখতে পারেন যোগাসনে। এমন একটি কার্যকরী আসনের নাম চক্রবাকাসন।
চক্রবাকাসন কী?
সংস্কৃত শব্দ ‘চক্রবাক’ থেকেই এই ব্যায়ামের নাম হয়েছে চক্রবাকাসন। ইংরেজিতে যা ‘রাডি গুজ পোজ’ নামেও পরিচিত। নাম শুনেই অনেকটা অনুমান করা যায় ভঙ্গিটি কেমন হতে পারে। গোটা শরীরের ভঙ্গিটি দেখতে অনেকটা ‘রাডি গুজ’ কিংবা রাজহাঁসের মতো হবে।
কীভাবে চক্রবাকাসন করবেন?
ঊরু থেকে পায়ের নীচের অংশ অনেকটা উল্টো ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের মতো হবে। এসময় শ্বাস-প্রশ্বাস একেবারে স্বাভাবিক থাকবে। চোখ থাকবে মাটির দিকে।
এবার দুটি হাত সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ করে গোড়ালির ওপর বসুন। এসময় গ্রীবা থাকবে টান টান, মাথা মাটিতে ঠেকে থাকবে। দুই হাঁটু প্রায় বুকের কাছাকাছি জায়গায় গিয়ে ঠেকবে। এই অবস্থানে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। আবার প্রথম অবস্থানে ফিরে যান।
এক বার বসে তারপর আবার উঠলে একটি রাউন্ড সম্পূর্ণ হবে। এভাবে অন্তত পাঁচবার চক্রবাকাসন অভ্যাস করা যায়।তবে এই আসন করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। শ্বাস নিতে নিতে হামাগুড়ি, অর্থাৎ ‘টেবিল টপ পোজ’ ভঙ্গি থেকে হাত, পিঠ, কোমর টেনে পায়ের ওপর বসতে হবে। পিঠ, কোমর, নিতম্বের অবস্থান দেখলে ‘রাডি গুজ’ বা রাজহাঁসের মতো মনে হবে। আবার, ‘রাডি গুজ’ পোজ থেকে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ‘টেবিল টপ’, অর্থাৎ হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে ফিরে যেতে হবে।
প্রথমে হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে ম্যাটের ওপর বসুন। ইংরেজিতে একে ‘টেবিল টপ পোজ’ বলা হয়। এসময় পুরো শরীরের ভার থাকবে হাতের তালু এবং হাঁটুর ওপর।
কেন এই ব্যায়াম করবেন?
এই আসনটি বিচলিত মন শান্ত করে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে। এই ব্যায়াম করলে মেরুদণ্ড সচল এবং স্বাভাবিক থাকে। বৃদ্ধি পায় ঘাড়, কাঁধ, পিঠ এবং কোমরের পেশির নমনীয়তা। শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে অঙ্গ সঞ্চালনার সংযোগ তৈরি হয়।
সতর্কতা
ঘাড়ে, পিঠে বা শিরদাঁড়ায় কোনো আঘাত বা চোট থাকলে এই আসন না করাই ভাল। হাঁটুতে ব্যথা থাকলে বেশিক্ষণ ‘টেবিল টপ’ ভঙ্গিতে থাকা উচিত হবে না। তাই সতর্ক থাকতে হবে। ভার্টিগো, স্পন্ডিলোসিস কিংবা স্পন্ডিলাইটিসের মতো রোগ থাকলেও সাবধানে থাকতে হবে।