সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান, ১৭ জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার ২০

সংগৃহিত ছবি

বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে দিনভর অভিযানে গোলাগুলির পর জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ১৭ সদস্য এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী বম পার্টির (কেএনএফ) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে গ্রেপ্তারদের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে নিখোঁজ হওয়া বেশ কয়েকজনও রয়েছেন বলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন।

বুধবার বান্দরবানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সম্প্রতি জঙ্গিদের যে প্রশিক্ষণের ভিডিও পাওয়া গেছে সেই ভিডিও’র পাঁচজনও রয়েছে গ্রেপ্তারদের মধ্যে। জঙ্গিদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী বই, লিফলেট, সাত লাখ টাকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করার কথা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে বলা হয়, গত ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বম পার্টির তিনজন এবং সাত জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অভিযানের পর সংগঠনের বাকি সদস্যরা রামজুদান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে যায়। পরে র‌্যাবের অভিযানে জঙ্গিরা স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। খন্দকার আল মঈন বলেন, সোমবার রাতে র‌্যাব জানতে পারে, জঙ্গিদের একটি দলটি বান্দরবানের থানচির লোয়াংমুয়াল পাড়া হয়ে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে আসছে।

এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালালে জঙ্গি ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা র‌্যাবের ওপর গুলি চালায়। সেখানে র‌্যাবের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়। মঙ্গলবার অভিযান চলাকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন থানচির-লিক্রি সীমান্ত সড়কে তমা-তুঙ্গী পর্যটন স্পট এলাকায় সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযানের মধ্যেই আমরা জানতে পারি, জঙ্গিরা এখানে জড়ো হচ্ছে। ২৮ জানুয়ারি তারা আমাদের একটি টহল দলের ওপর অ্যামবুশ করে। আমরা জানতে পারি, তারা রেমাক্রি ব্রিজ ক্রস করবে। এ তথ্যের ভিত্তিতেই আমাদের দল সেখানে অবস্থান নেয়। মঙ্গলবার সকালে যখন তারা পার হচ্ছিল র‌্যাবের ছয়টি টহল দলের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময় চলেছে থেমে থেমে।

অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭ জঙ্গি হলেন- কুমিল্লা সদরের আস সামী রহমান সাদ (১৯) ও সাখাওয়াত হোসেইন ওরফে মাবরুর ওরফে রিসিং (২১), বরগুনার বেতাগীর সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), পটুয়াখালী সদরের আল আমিন ফকির ওরফে মোস্তাক (১৯) ও মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ হোসেন ওরফে দোলন (২৬), কুমিল্লার লাঙ্গলকোটের জহিরুল ইসলাম ওরফে ওমর ফারুক ওরফে সাংওয়াই (২৭), মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির রিয়াজ শেখ ওরফে জায়েদ (২৪), পটুয়াখালীল মহিপুরের ওবায়দুল্লাহ ওরফে সাকিব ওরফে শান্ত (২০)। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের জুয়েল মাহমুদ (২৭), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর ইলিয়াস রহমান ওরফে তানজিল ওরফে সোহেল ওরফে থানবোয়াং (৩২), ঝালকাঠি সদরের হাবিবুর রহমান ওরফে মোড়া (২৩), বরিশাল কোতোয়ালী থানা এলাকার আব্দুস সালাম রাকি ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল (২৮), কুমিল্লার লাকসামের যোবায়ের আহম্মেদ ওরফে আইমান ওরফে রেনাল ওরফে ওমর (২৯), পটুয়াখালীর দশমিনার শামীম হোসেন ওরফে আবু হুরাইরা ওরফে রাফি ওরফে চামদুর (২৬), হবিগঞ্জের মাধবপুরের তাওয়াবুর রহমান সোহান ওরফে মিন্ট ওরফে মাওবক ওরফে জাকির আলম (২০), বরিশাল সদরের মোহাম্মদ মাহমুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০) এবং মাগুরার মোহাম্মদ আবু হুরাইরা ওরফে মিরাজ ওরফে সাইসো (২২)।

গ্রেপ্তার বম পার্টির তিন সদস্য হলো- লাল মোল সিয়াম বম, ফ্লাগ ক্রস ও মালসম পাংকুয়া। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে গোলাবারুদসহ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের খবর জানায় র‌্যাব। সেদিনও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে র‌্যাবের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলি হয়েছিল।

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসারের সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ বা বম পার্টির সম্পৃক্ততার খবর গত অক্টোবরে জানিয়েছিল র‌্যাব। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসছে এই এলিট বাহিনী। 

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন