শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য

জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য

র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁর সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ‘মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ’ বলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। রোববার বিকালে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় প্রতিবেদনটি পাঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন। জেসমিনের মৃত্যুর পর ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্ত করে।

কফিল উদ্দিন বলেন, মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথার এক জায়গায় ও হাতে যে আঘাত পাওয়া গেছে সে আঘাত মৃত্যু হওয়ার মত নয়। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। র‌্যাব বলছে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়া হয়। গত ২৪ মার্চ শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান জেসমিন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।

সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, আটকের পর জেসমিনকে র‌্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মৌমিতা জলিল বলেন, ওই নারীকে ২২ মার্চ দুপুরে নওগাঁ হাসপাতালে আনা হলে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সেদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হলে ঢাকায় বাহিনীটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল। এই অভিযোগে সেই সচিবের উপস্থিতিতে আটক করা হয় তাকে। গত ২৫ মার্চ বিকালে পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে সুলতানার মরদেহ দাফনের পর র‌্যাবের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন তার স্বজনরা।

জেসমিনের মৃত্যুর খবর দেখে গত ২৭ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেয়। আদেশে লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন চাওয়া হয়। ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে জেলায় মানববন্ধন করেছে একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। গত ৩০ মার্চ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, জেসমিনকে আটকের অভিযানে থাকা ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্যান্য সদস্য ও গাড়িচালকও রয়েছেন। এই ঘটনা তদন্তে র‌্যাব সদরদপ্তর কমিটিও গঠন করেছে। তারা সেই অভিযানে থাকা বাহিনীটির সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ