শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিচ্ছে ‘ডিপসিক’

চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিচ্ছে ‘ডিপসিক’

প্রযুক্তির দুনিয়ার নতুন নাম ডিপসিক। চীনা কোম্পানি ডিপসিকের তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই চালিত চ্যাটবট যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাপল স্টোরের সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড করা ফ্রি অ্যাপের তালিকায় সবার উপরে উঠে এসেছে।

এই অ্যাপের হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এবং মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর সাথে ডিপসিকের খরচের পার্থক্য প্রযুক্তির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।


সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা মার্ক আন্দ্রিসেন ডিপসিককে এআই দুনিয়ার 'অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার' হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

ডিপসিকের মুল প্রতিষ্ঠানটি বলছে তাদের নতুন এআই মডেল বাজারের শীর্ষ এই মডেল যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ। তবে চ্যাটজিপিটির তুলনায় তাদের এআই মডেল তৈরিতে খরচ হয়েছে বহুগুণ কম।

অ্যাপ তৈরির গবেষণা দল বলছে এই অ্যাপটি তৈরি করতে তাদের ৬০ লাখ ডলার লেগেছে যা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এআই কোম্পানিগুলোর খরচ করা শতকোটি ডলারের তুলনায় রীতিমতো নগণ্য।

ডিপসিক কী?

ডিপসিক একটি চীনা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব চীনের শহর হাংঝুতে।

কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। তবে তাদের জনপ্রিয় এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ছাড়া হয় এ বছরের ১০ জানুয়ারি।

ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং কে?

লিয়াং ওয়েনফেং ডিপসিকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি হেজ ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে ডিপসিক তৈরি করেন।

ডিসসিক কী কাজে লাগে?

ডিপসিক জনপ্রিয় হয়েছে এর শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট টুলের জন্য। এটির কার্যক্রম চ্যাটজিপিটির মতই।


অ্যাপ স্টোরে দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী এটি তৈরি করা হয়েছে 'আপনার কর্মদক্ষতা বাড়াতে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে।'

অ্যাপের রেটিং দেয়ার সময় ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন যে অ্যাপটি 'আপনার লেখাকে আরো ভাব গম্ভীর করে তোলে।'

তবে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে এই চ্যাটবটটি অপারগতা প্রকাশ করতে পারে। যেমন এই অ্যাপটিকে যখন বিবিসি জিজ্ঞেস করে যে ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানানমেন স্কোয়ারে কী হয়েছিল, তখন ডিপসিক উত্তর দেয় যে- ‘আমি দুঃখিত, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমি একজন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং আমাকে এমন উত্তর দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা সহায়ক এবং ক্ষতিকর নয়।’

অর্থাৎ চীনা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অ্যাপ হওয়ায় চীন যেসব বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মনে করে, সেসব বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে এই এআই চ্যাটবট শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে।

এনভিডিয়ার মত মার্কিন কোম্পানি কেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এআই অ্যাপগুলো তৈরিতে যে খরচ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরিতে। মার্কিন অ্যাপগুলোর তুলনায় কয়েকশো কোটি ডলার কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরি করতে। আর খরচের এই তারতম্যের কারণে এআইয়ের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

ডিপসিকের অ্যাপ তৈরিতে কম খরচ হওয়ার বিষয়টি ২৭ জানুয়ারি পুঁজি বাজারের হিসেব বদলে দিয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চিপ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান ও ডেটা সেন্টারের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে বড় অঙ্কের পরিবর্তন এসেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া, যারা এআই পরিচালনার জন্য শক্তিশালী চিপ তৈরি করে থাকে।

সোমবার তাদের বাজার মূল্য কমেছে ৬০ হাজার কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনের হিসেবে কোনো একটি কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ।

বাজারে মূলধনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান এতদিন এনভিডিয়া থাকলেও সোমবার তাদের বাজার মূল্য ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ২.৯ ট্রিলিয়ান ডলারে নেমে আসলে তারা মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের পর তৃতীয় স্থানে নেমে আসে।

ডিপসিক তাদের এআই-এর জন্য এনভিডিয়ার তুলনায় অনেক কম দামী ও কম জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য বিশ্বের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন এক বাস্তবতার সামনে ফেলেছে।

এতদিন একটা সাধারণ ধারণা ছিল যে এআইকে উন্নত করার জন্য বড় বাজেট এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি চিপ অবশ্য প্রয়োজনীয়। তবে ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য এই ধারণাকে এবং ভবিষ্যতে এআইয়ের বাজারকে বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


সূত্র: বিবিসি

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন