ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার একটি গ্রাম গৌরিনাথপুর। রসালো সুস্বাদু ড্রাগন ফলের জন্যে সুন্দর নামের এ গ্রামটি নতুন করে পরিচিত হচ্ছে সবার কাছে। গৌরিনাথপুর এখন যেন ড্রাগনের রাজত্ব। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়, যা এই গ্রামসহ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখছে।
নিভৃত গ্রাম গৌরিনাথপুরে ঢুকতেই একটা সাইনবোর্ডে চোখে পড়ে। সেখানে লেখা ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আর ড্রাগন ফলের রাজধানী গৌরিনাথপুর’। এই সাইনবোর্ডের বদৌলতেই হোক বা ড্রাগন ফলের বাম্পার ফলনের কারণেই হোক, গৌরিনাথপুর এখন ‘ড্রাগন গ্রাম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠছে।
কোটচাঁদপুর পৌর শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে কোটচাঁদপুর-পুড়াপাড়া সড়কে মাত্র তিন মাসে ড্রাগনের অনেক বড় হাট জমে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি দরে এই রসালো ফল কিনতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন।
গৌরীনাথপুর হাট কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, এই উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক ড্রাগন চাষ হওয়ায় আমি এই হাটে আড়ত হিসেবে বড় একটি টিনের চালা দেই। এলাকার মানুষ অনেকেই সে সময় আমাকে পাগল বলেছিল। তারা বলেছিল, গ্রামের মধ্যে ড্রাগনের আবার পাইকারি বাজার হয় কখনো। আমি তখন জেদের বশেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ড্রাগনের ব্যবসা শুরু করি।
তিনি বলেন, আমার একটিমাত্র আড়তে ব্যাপক বেচাকেনা দেখে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ওই বাজারে এখন ৩০টি বড় বড় ফলের আড়ত বসে। এ ড্রাগন ফলের হাটে প্রতিদিন প্রায় গড়ে পাঁচ কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে।
আড়ত মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব আড়তে প্রায় আড়াইশ শ্রমিক কাজ করছে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকে কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিল।
আড়ত শ্রমিক ইব্রাহিম জানান, প্রতিদিন তাদের দুপুরে খাওয়া বাবদ ১০০ টাকা ও দিন শেষে ৫০০ টাকা করে দেয়া হয়।
ঢাকা থেকে আসা বেপারী আবুল কালাম জানান, একই জায়গায় মান যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা ফল কিনতে পারছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে সারদেশ থেকে বেপারীরা আসে ফল কিনতে এ হাটে। সঠিক দামে ভালো পাওয়া যায়।
আড়তদার জসিম উদ্দীন জানান, মাত্র সাড়ে ৩ মাসের এ হাটে এখন প্রতিদিন বেচাবিক্রি হয় ৫ কোটি টাকার ড্রাগন। অনেকে এলাকার নাম পরিবর্তন করে বলছেন ড্রাগনপুর। সারাদেশ থেকে বেপারিরা সপ্তাহে ৭ দিনের এ হাটে আসছেন। মান ভেদে এক কেজি ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। এতে লাভবান হচ্ছেন ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ জেলার ড্রাগন চাষিরা।
ঝিনাইদহ জেলা বিপণন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, চাষিদের ন্যায্যমূল্য পেতে ও বাজার ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে। জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, ড্রাগন চাষে চাষিদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।