জ্বালাও-পোড়াও বিএনপির উৎসব, অগ্নিসন্ত্রাস তাদের চরিত্র। তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা, ধ্বংস করা, পুলিশের ওপর হামলা করা। কীভাবে এটা বন্ধ করতে হয় সেটা আমাদের জানা আছে। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রাজধানীর আরামবাগে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে ব্যানার, মিছিল নিয়ে এরই মধ্যে দলে দলে যোগ দেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাদের স্লোগানে মুখরিত আরামবাগসহ আশপাশের এলাকা।সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রত্যেকের মুখেই দলীয় স্লোগান। এর মধ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেকে স্লোগান দিচ্ছেন ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’।
বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি মানেই ধ্বংসের রাজনীতি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৮ অক্টোবর পুলিশ যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। অথচ তারা কী করলো? রাস্তায় পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করলো, আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলো। এটাই কি রাজনীতি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহীতে মাটিতে ফেলে পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটা স্মরণ রাখা দরকার। আমি ঢাকার মানুষকে বলবো, যারা আগুন দিতে আসবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করলাম। এ মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। তবে মেট্রোরেলটি ব্যবহারের সময় আমাদের যত্নবান হতে হবে। যাতে করে এটার ক্ষয়-ক্ষতি না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, একের পর এক বড় বড় স্বপ্ন পূরণ করছি। আওয়ামী লীগ মানুষের স্বপ্ন পূরণে সব সময় কাজ করে। উড়ালের পর এবার পাতাল রেল করা হবে।
তিনি বলেন, এই ঢাকার মানুষের জন্য আজ আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যারা উত্তরায় বসবাস করেন তারা মাত্র ৪০ মিনিটেই প্রতিদিন উত্তরা থেকে মেট্রোরেলে করে মতিঝিল আসা যাওয়া করতে পারবেন। উত্তরা আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করত। মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এ মেট্রোরেল আমি বর্ধিত করেছি। সেটার কাজও চলছে। একইসঙ্গে আমরা সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করব। সেটার কাজও আমরা করছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকে মেট্রোরেলে চড়ে আমি এ অনুষ্ঠানে এসেছি। মেট্রোরেলটি ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ঘাতকরা তাকে হত্যা করে। আমাদের জয় বাংলা স্লোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনের একটি কালো অধ্যায়। ১৫ আগস্টের সময় যারা সরকারে ছিল তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।
তিনি বলেন, আমরা দুই বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলাম। ৬ বছর জিয়াউর রহমান আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্টও দেয়নি। আমি আওয়ামী লীগ ও দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যারা আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন। আমি এমন একটি সময় দেশে ফিরেছিলাম যখন স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের ক্ষমতায় ছিল। প্রতিনিয়ত আমার ওপর আঘাত আসে। আমার নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে বারবার আমাকে রক্ষা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারণে আমি বারবার জীবন ফিরে পেয়েছি। আমিও বাবার মতো এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। যে আদর্শ নিয়ে এই দেশ গড়ে তুলেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ ঢাকার মানুষের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যানজটে কষ্ট পেতে হবে না, রাস্তায় আটকে থাকতে হবে না। এই ঢাকায় যারা চাকরিজীবী, যারা কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক সকলে, বিশেষ করে আমার মেয়েরা, নারীরা, নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এ মেট্রোরেলে।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২টা ৪১ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির এ যানে আগারগাঁও থেকে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর ৩টা ৬ মিনিটে রেলের মতিঝিল প্রান্তে পৌঁছান তিনি।