শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

আশুলিয়ায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ৩

আশুলিয়ায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ৩

মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে আশুলিয়ার পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আবারও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের পাল্টিপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে এসময় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বেশ কয়েকটি কারখানার ফটক ভাঙচুর করেছেন।শনিবার সকাল থেকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক।  গত কয়েকদিন মজুরি বৃদ্ধির দাবী আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। আহত তিনজন হলেন আমির হোসেন, মো. শামিম ও মো. তাজউদ্দিন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে রাবার বুলেটের গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমির হোসেন পেশায় ভ্যান চালক। বাকী দুইজন পোশাক শ্রমিক হলে তারা জামগড়ায় পরিবারের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। যাওযার পথে তারা আহত হন। শিল্প পুলিশ-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল বারী বলেন, সকালে আশুলিয়া জামগড়া এলাকার বেশ কয়েক কারখানার শ্রমিকরা ভিতরে ঢুকে আবার বের হয়ে আসে। তারপর সড়ক অবরোধে করে বিক্ষোভের চেষ্টা করে। সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া। তাদের ছত্র ভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও জলকাামান ব্যবহার করা হয়। তবে এঘটনা কোন আহতের হওয়ার খবর পাইনি। আমরা মুলত কাউকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল বা রাবার বুলেট ছোড়া হয়নি। ভয় দেখানোর জন্য উপরের দিকে ছোড়া হয়। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যেসব কারখানা থেকে শ্রমিক বের হয়েছিল। দুপুরের পর এনভয়, রোজসহ অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, সকাল ৯ টার পর হাসপাতালে আহত হয়ে ৩ জন আসে। তাদের পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার লুলেট বা ছররা গুলিতে আহত হন। তারা ৩ জনই চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকার কারখানাগুলোয় আজ সকাল থেকে কাজ শুরু করেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। তবে প্রায় ১০ টি কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা দিয়েই বের হয়ে যান। পরে তাঁরা আবদুল্লাপুর-বাইপাইল সড়কের জামগড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে পুরুষ শ্রমিক জানায়, আমাদের মজুরি বৃদ্ধির দাবী মেনে নিচ্ছে না। শ্রমিকদের গুলি করছে এর বিচার আমরা চাই। আরেক নারী শ্রমিক বলেন, দুইদিন আগে আমি বাসায় যাওয়ার সময় আমাকে খালি খালি পুলিশ লাঠি দিয়ে ভারি দিছে। আমাদের শুধু দাবী বেতন ২৩ হাজার টাকা করুক। আমাদের পেট চলে না। শ্রমিক মেরে ফেলছে। মালিক কারখানার ভিতরে বাইরে লোক ঢুকাইয়া শ্রমিকদের মারধর করতাছে। ঘর ভাড়া বেশি, চাউলের দাম বেশি। বেতন না বাড়ইলে আমরা কেমনে চলমু।শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কেউ কোন গুজবে কান দিবে না। সামাজিক মাধ্যমে অনেক হুজব সৃষ্টি করা হচ্ছে। আপনারা শ্রমিক-মালিক এদেশের অর্থনীতি চাকা সচল রেখেছেনে। কোন সমস্যা হলে মালিক উভয় পক্ষ বসে আলোচনা করুন। এছাড়া কোন গুজবকে কান না দিয়ে অসন্তোষ তৈরি না করার অনুরোধ করছি শ্রমিকদের প্রতি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। এ্র বাইরে যদি কেউ কোন বিশৃঙ্খলা বা গুজব সৃষ্টি করেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ সংক্রান্ত আশুলিয়া থানায় দুইটি মামলা হয়েছে।  এরআগে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আজ শনিবার সকালে রাব -৪ এর (সিপিসি-২) সাভার নবীনগর ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।তিনি বলেন, 'আশুলিয়াসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উস্কানীদাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার কথাও নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া উস্কানীদাতাদের বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী রয়েছে জানিয়ে শ্রমিকদের গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন